মো: সাকিব চৌধুরী
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে জনবল সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। রোগীরা হচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত। জনবল সংকটের বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া হাসপাতালের কিছু নার্স ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বিরুদ্ধে রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, হাসপাতালের কিছু নার্স ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী রোগীদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রোগীদের খোঁজখবর না নিয়ে নার্স ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের অনেকে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে রোগী এবং স্বজনরা অভিযোগ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানগেছে, ৫০০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে ২ হাজারের বেশি রোগীর চিকিৎসাসেবা। ১ হাজার ৮৭৫ জন জনবলের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ১ হাজার ৫৯৯ জন। শূন্য পদ রয়েছে ৩৩৯টি। এতে মারাত্মকভাবে চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে। এছাড়াও হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নোংরা পরিবেশসহ নানা অভিযোগ রয়েছে রোগী ও স্বজনদের। সিন্ডিকেটের দৌড়াত্মও রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের উন্নত চিকিৎসার একমাত্র আশ্রয়স্থল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এখানে শয্যা সংখ্যা ১০০০ হলেও জনবল রয়েছে ৫০০ শয্যার। রয়েছে ইনডোর, আউটডোর, জরুরি বিভাগ ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। এ ছাড়াও ডায়রিয়া ট্রেনিং ইউনিট, ইপিআই প্রোগ্রাম, ইওসি কার্যক্রম, ডক্টরস কর্নার, এম আর ক্লিনিক, মডেল ফ্যামিলি প্ল্যানিং ক্লিনিক, ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার, সমাজসেবাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালু রয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে হাসপাতালটিতে আধুনিক সিসিইউসহ মোট ৪২টি ওয়ার্ড, ১২টি ওটি, ১০ শয্যার আইসিইউ, ২৫ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট, ৬ শয্যার ডে-কেয়ার ইউনিট, ভায়া সেন্টার, ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং সেন্টারে রোগীদের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে আরোও জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির ও অন্যান্য মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ৩২২ জন। এখানে জনবল রয়েছে ২২৭ জন। শূন্য পদ রয়েছে ৯৫টি। দ্বিতীয় শ্রেণির নার্স ও অন্যান্য পদের সংখ্যা রয়েছে ৯৯৩ জন। এখানে কর্মরত রয়েছেন ৯৭০ জন। শূন্য পদ রয়েছে ২৩টি। তৃতীয় শ্রেণির ১০৫টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৬৬ জন। এখানে শূন্য পদ রয়েছে ৩৯টি। চতুর্থ শ্রেণির ৪৪৫টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২৬৩ জন। এখানে শূন্য পদ রয়েছে ১৮২ জনের।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫০০ শয্যার এ হাসপাতাল ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও প্রতিদিন এখানে ২ হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালটিতে বিভিন্ন সময় শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি এবং চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়ালেও সেই তুলনায় জনবল সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে । কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেনা রোগীরা।
হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতাল ভবনের বাইরের যত্রযত্র অবস্থায় পড়ে আছে আবর্জনা। এসব ময়লা আবর্জনা থেকে রোগীদের রক্ষা করার কোনও চেষ্টা নেই কর্তৃপক্ষের। বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাশে থাকা পাবলিক টয়লেটগুলোর দরজা ভাঙ্গা ও নোংরা জরাজীর্ণভাবে পড়ে আছে।
নীলফামারী থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আয়েশা বেগম বলেন, দুইদিন ধরে আমার ছেলের সঙ্গে হাসপাতালে আছি, আমি নিজেই এখন অসুস্থ হয়ে পড়ছি।
পঞ্চগড় বোদা উপজেলা থেকে আসা রোগী আমিনুল ইসলাম ও ঠাকুরগাও সদরের নুর ইসলাম সহ কয়েকজন রোগী বলেন, হাসপাতালে কাঙ্খিত সেবা নেই। মানুষজন নিরুপায় হয়ে এখানে ভর্তি হন। অথচ সেবা বঞ্চিত হয় মানুষ। নার্স ও চিকিৎসকরা অনেকেই খোঁশ গল্পে মেতে থাকেন।
তবে সচেতন মহল মনে করছেন, এই হাসপাতালকে ঘিরে টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তারে একটি সিন্ডিকেট সব সময় সক্রিয় থাকায় হাসপাতালের সুষ্ঠু সেবা ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হচ্ছে। একটি মহল যুগ যুগ ধরে মেডিকেলের বিভিন্ন টেন্ডারে কাজ পেয়ে আসছেন এমনও অভিযোগ রয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুস আলী বলেন, জনবল সংকটটি দীর্ঘ দিনের। নতুন করে কোনো জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।