রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, রংপুর পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় বসবাসরত বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধগাঁথা, যুদ্ধের বর্ণনা ও ইতিহাস নিয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক সংকলিত ও প্রকাশিত “মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা” নামক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের অসংখ্য সদস্য শহীদ হয়েছেন, যাঁদের আত্মত্যাগ আমাদের অনেকের কাছেই অজানা। স্বাধীনতা পরবর্তী জীবিত অনেক পুলিশ সদস্যের বীরোচিত ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদান আমরা তাদের নিকট থেকে জেনেছি। বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকলেই বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন, অনেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। বার্ধক্যজনিত কারণে অনেকে নিভৃত জীবনযাপন করছেন, ফলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলি হারিয়ে যেতে বসেছে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিগুলি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভবের প্রেক্ষাপটে রংপুর মহানগরীতে বসবাসরত বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধের আত্মস্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সম্মানিত পুলিশ কমিশনার জনাব মোহাঃ আবদুল আলীম মাহমুদ বিপিএম মহোদয়ের সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সংকলনটি প্রকাশিত হল।
রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় বসবাসরত বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালীন স্মৃতির বর্ণনা ও ইতিহাস লিখিতভাবে তাঁদের নিকট থেকে গ্রহণ করে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা’ নামক গ্রন্থ প্রকাশ হয় এবং একইসাথে তাঁদের বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের অবদান গর্বের ইতিহাস হিসেবে সংরক্ষণের নিমিত্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সংগৃহীত তথ্যসমূহ ডকুমেন্ট আকারে সংরক্ষণের লক্ষ্যে পরবর্তীতে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে প্রেরণ করা হবে।
স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধকারী বাংলাদেশ পুলিশের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও কালজয়ী অবদান সর্বজনবিদিত। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের নির্ভীক ও নিঃশঙ্কচিত্ত বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের অনন্য কীর্তির স্বীকৃতি হলো ২০১১ সালে বাংলাদেশ পুলিশের ‘স্বাধীনতা পদক’ প্রাপ্তি। পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের অনেক সদস্যও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের ব্যক্তিগত কৃতিত্ব ও বীরত্বপূর্ণ কর্মের জন্য নানা বীরত্বসূচক খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার অসামান্য আত্মত্যাগ আমাদের গৌরবময় মহান স্বাধীনতার ইতিহাস।
‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা’ বইটিতে প্রদত্ত বাণীতে আইজিপি মহোদয় বলেন, ‘রংপুর মহানগরীতে বসবাসরত বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাগণের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও ইতিহাস নিয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ‘মুক্তিযুদ্ধের আত্মস্মৃতি’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। একই সাথে তাঁদের বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করে সংরক্ষণের নিমিত্ত পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে প্রেরণের উদ্যোগ একটি প্রশংসনীয় ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমি আশা করি, বাংলাদেশ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও তাদের নিজ নিজ এলাকায় বসবাসরত বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস ও বিবরণ একইভাবে পুস্তক ও ভিডিও আকারে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সংরক্ষিত এসব ডকুমেন্টস্ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরকে যেমন সমৃদ্ধ করবে তেমনি পরবর্তী প্রজন্মের নিকট আমাদের গৌরবময় ইতিহাস পৌঁছে দিতে পারবে।’
আইজিপি মহোদয় তাঁর বাণীতে আরও উল্লেখ করেন, ‘গৌরবময় মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে “মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা” নামক গ্রন্থটি প্রকাশের উদ্যোগ একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, গ্রন্থটি পড়ে পরবর্তী প্রজন্ম মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের অকুতোভয় বীর সদস্যদের অপরিসীম আত্মত্যাগ ও আত্মনিবেদনের ইতিহাস জানতে পারবে। একইসাথে বইটি পড়ে তারা নিজেদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আত্মনিয়োগ করবে।’
উল্লেখ্য যে, পুলিশ সপ্তাহ ২০২০ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে ৯ জানুয়ারি ২০২০ খ্রি. মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাগণের সাথে আইজিপি মহোদয়ের সম্মেলনে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার জনাব মোহাঃ আবদুল আলীম মাহমুদ বিপিএম বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধগাঁথা, যুদ্ধকালীন কর্মকান্ড, স্মৃতিসমূহ ও ইতিহাস সংগ্রহপূর্বক বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে সংরক্ষণের প্রস্তাব করেন। আইজিপি মহোদয় প্রস্তাবটি লিখিতভাবে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করলে পরবর্তীতে পুলিশ কমিশনার মহোদয় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের স্মারক নং- ১৬০ (স:দ:); তারিখ- ১২/০১/২০২০ খ্রি. মোতাবেক পুলিশ হেডকোয়ার্টারে বর্ণিত প্রস্তাব প্রেরণ করেন।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ আবদুল ওয়াহাব ভূঞা, বিভাগীয় কমিশনার, রংপুর; সভাপতিত্ব করেন রংপুর মেট্রোপলিটন এর সম্মানিত পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ আবদুল আলীম মাহমুদ বিপিএম। উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জনাব দেবদাস ভট্টাচার্য্য বিপিএম, রেঞ্জ ডিআইজি, রংপুর; জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার জনাব মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু; পুলিশ সুপার, রংপুর জনাব বিপ্লব কুমার সরকার বিপিএম (বার), পিপিএম, সভাপতি, প্রেসক্লাব রংপুর, সভাপতি রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুর, সভাপতি ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন রংপুর, ২২ জন বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা (যাদের বক্তব্যে সমৃদ্ধ হয়েছে বইটি) ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জনাব মেহেদুল করিম পিপিএম-সেবা, সকল উপ-পুলিশ কমিশনার, অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার, সহকারী উপ-পুলিশ কমিশনার, সহকারী পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) এবং অন্যান্য পুলিশ অফিসারবৃন্দ।