তুহিন চৌধুরী
রাজনৈতিক -সামাজিক- ক্রীড়া সংগঠক।
গত কয়েক বছর যাবৎ চামড়ার চামড়া তুলে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু জুতার দাম কয়েকগুন বা চামড়াজাত পণ্যের দাম অনেক বেশি এবং দিন দিন এ পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। কিন্তু চামড়ার আহাজারি থামছে না। চামড়া শিল্প বাংলাদেশ সরকারের ইন্ডাষ্ট্রি মিনিষ্ট্রির আওতায়। আর এর দাম নির্ধারণ এবং সংরক্ষণের দায় বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের এর ঘাড়ে। যারফলে যতদোষ নন্দঘোষ। প্রতি বছর প্রায় ছোট বড় মিলিয়ে ১ কোটির উপরে চামড়া শুধুমাত্র ঈদের সময় উৎপাদন হয়।
একসময় বাংলাদেশের চামড়ার অনেক সুনাম ছিলো। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য এর পিছনে রয়েছে এক প্রকার অসাধুদের তৎপরতা। সরকার প্রতিবছর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ন পরিবেশে আলোচনা করে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে এবং প্রশাসনিক সব রকম সহযোগিতা করে থাকে । চামড়ার মূল মেটেরিয়াল লবণ। ৪/৫ ঘন্টার মধ্যে লবন মাখানো হলে আপনার সংগৃহীত চামড়া প্রায় একমাস পর্যন্ত রাখা যায়। আর এ কারণেই ফড়িয়া -মৌসুমী-ব্যবসায়ীগণ সুযোগ নিয়ে থাকেন। লবন আমাদের দেশে পর্যাপ্ত বিধায় আমদানির কোন প্রয়োজন নেই।
কিন্তু সবচেয়ে বড় চামড়া উৎপাদনের সময় দেশের লবণের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। সরকার সব সময় ব্যাংক সহায়তার কথা বললেও এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলি কথা রাখে না বলে অভিযোগও রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের ব্যবসায়ীগণেনর মধ্যে চলছে হতাশা এবং নানা রূপ জটিলতা। আগে আমরা যে কোন চামড়ার জুতা -ব্যাগ এর দাম দেখতাম কম আর এক দিকে দেখতাম চামড়ার দাম বেশী। কিন্তু কয়েক বছর যাবৎ লক্ষ্য করা যাচ্ছে উল্টো । চামড়া নিয়ে বিরক্তি কিন্তু জুতা বা যে কোন চামড়া জাতীয় দ্রব্য কিনতে গেলে তা বহু গুণ দাম বেশী।আর এক দিকে একসময় বিখ্যাত হাজারীবাগ ট্যানারি ছিলো সকলের পরিচিত কিন্তু পরবর্তীতে এই ট্যানরি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হলেও রাতারাতি জোর করে কোনরূপ ব্যবস্থা না করেই তোড়জোড় করাটাও ছিলো একধরনের রহস্য।কেননা ঐ সময় ব্যাবসায়ীদের কথা বা পরামর্শ শুনলে অবশ্যই কাজ হতো। যাই হোক বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাভার টেনারি শিল্প এলাকায় সরকার অনেক কাজ করছে।
তবে এক্ষেত্রে সরকার ইতিমধ্যে দুইটি কোম্পানিকে বিদেশে চামড়া রপ্তানির জন্য অনুমতি প্রদান করেছে। এর পাশাপাশি উপজেলা ভিত্তিক লবণ মাখানো চামড়া সংরক্ষনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা যায় নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং এক্ষেত্রে তৃনমূল পর্যায়ে সহায়তা করা গেলে মনোপলি বা চামড়া নিয়ে কারসাজি হবে না বলে আশা করা যায় । পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানির অনুমতি প্রদানে যারা চিৎকার করে বলেন রপ্তানির অনুমতি দিলে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের কাছে প্রশ্ন চামড়া যখন মাটিতে পুতে বা ফেলে দেয়া হয় তখন আপনাদের এই কথা কোথায় থাকে। বলা হয় চামড়া বা চামড়া বিক্রয় অর্থ এতিমের হক। এমতাবস্থায় দেশের অর্থনীতি এবং বৃহত্তর স্বার্থে চামড়া বা ব্লু হাইড্রেড চামড়া রপ্তানির অনুমতির প্রদানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন পাশাপাশি চামড়ার বাজার পুনরুজ্জীবন ফিরে পাওয়া যাবে। হ্যাঁ ব্যাবসায়ীগণ এ ক্ষেত্রে কম্পালায়েন্স কোম্পানী তৈরিতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিতে পারে । চামড়া নিয়ে প্রতি বছর সরকারকে বেকায়দায় ফেলানো বা এর পিছনে একধরনের নোংরামির রাজনীতিও তৈরী হয়। তাই আগে থেকেই এই ব্যাপারে প্রস্তুতি নিলে ফিরে আসবে ঐতিহ্যের চামড়া শিল্প।