বাংলাদেশ কৃষি নির্ভরশীল দেশ। গ্রামের অধিকাংশ লোক কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল হলেও এখন গ্রামের মানুষও বিভিন্ন ব্যবসার সাথে জড়িত হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে । গ্রামে বসবাস করেও ব্যবসা করা যায় তা নিয়ে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। আপনি চাইলেই স্বল্প পুঁজিতে গ্রামে বসে ছোট ব্যবসা থেকে শুরু করে বড় ব্যবসাও করতে পারেন। গ্রামে বসবাস করে মাত্র ১০-২০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করতে পারেন । পুঁজি বেশি থাকলে ১ লক্ষ টাকাতেও ব্যবসা শুরু করতে পারেন। গ্রামে বসবাস করে কিছু লাভজনক ব্যবসা যে করা যায়, তা-ই আপনাদের কাছে তুলে ধরা হলো :
স্টেশনারি ও লাইব্রেরি: গ্রামে স্টেশনারি, লাইব্রেরি খুব কম দেখা যায়। আর থাকলেও সেখানে চাহিদা মতো সবকিছু পাওয়া যায় না। গ্রামে একটি ভাল স্টেশনারি ও লাইব্রেরি দেয়া যেতে পারে। এখন প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে কিন্ডার গার্টেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা এবং মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ রয়েছে। তাই গ্রামে একটি ভালো মানের স্টেশনারি ও লাইব্রেরি থাকলে ক্রেতার অভাব হবে না।
ফ্লেক্সি লোড ও বিকাশ এর ব্যবসা: ফ্লেক্সি ও বিকাশ এর ব্যবসা শহরে সব জায়গাতেই কম-বেশি দেখা যায়। অনেক গ্রাম রয়েছে যেখানে এমন দোকান সচরাচর দেখা যায় না। তাই গ্রামে সুন্দরভাবে ফ্লেক্সি ও বিকাশ এর ব্যবসার পাশাপাশি সিমকার্ড,মোবাইল এক্সেসোরিস – মোবাইল এর কাভার, চার্জার, ব্যাটারি, হেডফোন ইত্যাদির ব্যবসা শুরু করা যায়।
মোবাইল সার্ভিসিং এর ব্যবসা: বর্তমান যুগে সবাই মোবাইল ফোনের উপর নির্ভরশীল। যোগাযোগ সচল রাখতে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই মোবাইল ফোন রয়েছে। আর মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে নষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। ফোন নষ্ট হলে মেরামত করতে শহরে যেতে হয়। গ্রামে একটি মানসম্মত মোবাইল সার্ভিসিং এর দোকান থাকলে মানুষ গাড়ি ভাড়া করে শহরে যাবে না। মোবাইল সার্ভিসিং এর কাজ ইচ্ছা করলে ঘরে বসেই করা যায়।
ফার্মেসী ব্যবসা: ফার্মেসী ব্যবসা গ্রামে আছে। তবে অনেক গ্রামেই ভাল ফার্মেসী নেই যেখানে প্রয়োজনীর সকল প্রকার ঔষধ পাওয়া যায়। ফার্মেসীতে যদি একজন এমবিবিএস ডাঃ এর সাথে কন্টাক্ট করে রোগী দেখার ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো। নিজে প্রাথমিক চিকিৎসার একটি কোর্স করে নিতে পারলে ব্যবসায়ে সফল হওয়া সম্ভব।
মুদির দোকান: মুদির দোকান গ্রামে থাকলেও অনেক সময় প্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া যায় না। তাই একটি ভাল মানের মুদির দোকান গ্রামে থাকলে ব্যবসার উন্নতি হবেই।
চা-পাতা এর ব্যবসা: চা-পাতার প্যাকেট পাইকারী দামে কিনে যদি চা স্টলে চা-পাতা বিক্রি করা যায়। এমন ৩০টি দোকান খুঁজে বের করে আশেপাশের কয়েকটা গ্রাম মিলে প্রতি প্যাকেটে ২০টাকা লাভ করলে ৬০০ টাকা এবং মাসে ১৮০০০ টাকা আয় করা সম্ভব।
উপহার সামগ্রীর ব্যবসা: মানুষ স্বভাবতই সৌখিন, গ্রামেও আজকাল ঘর সাজাবার জন্য অনেকেই বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করে থাকেন। তাছাড়া বিয়ে,জন্মদিন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মানুষ উপহার সামগ্রী প্রদান করে থাকেন। গ্রামের মানুষ উপহার সামগ্রী কেনার জন্য শহরে চলে আসে,তাই গ্রামে ভালো মানের উপহার সামগ্রী বিক্রির দোকান থাকলে ক্রেতা সেখানেই ভিড় জমাবে।
টেইলারিং এর কাজ: যদিও অনেক প্রচলিত কাজ। পরিবারে টুকটাক অনেকেই এই কাজ জানেন কিন্তু সময়ের প্রেক্ষিতে এই কাজ ভালোভাবে কম লোকই পারেন। যদি সুন্দর নতুন ডিজাইনের কাপড় সেলাই করা শেখা যায়; তাহলে গ্রামে ঘরে বসে কিংবা টেইলার্স দিয়ে পরিপূর্ণভাবে আয় করা সম্ভব।
বিউটি পার্লার: গ্রামে একটি স্মার্ট ব্যবসা হিসেবে বিউটি পার্লার ব্যবসা হতে পারে। গ্রামের বিয়েতে মেয়েরা অনেক দূর থেকে শহরে এসে বিউটি পার্লারে সাজ সজ্জা করে অথবা বিউটি পার্লারের কর্মী বাড়িতে এনে নিজেদের সৌন্দর্যের কাজ করে থাকে। তাই গ্রামে মান সম্মত বিউটি পার্লার দিতে পারলে অল্প সময়ের মধ্যে লাভবান হওয়া সম্ভব।
কৃষি পণ্যের ব্যবসা:গ্রামে ধান,ভুট্টা,গম,আলু,সবজি বীজ সংগ্রহ করে শহরে ভাল দামে বিক্রয় করা সম্ভব। সেই সাথে গ্রামে সার ও কীটনাশক এর ব্যবসাও শুরু করা যায়।
একই সাথে মাছের চাষ ও হাঁস-মুরগি পালন: এই ব্যবসার ধারণা অনেকের আছে কিন্তু খুব কম লোকই গ্রামে মাছ চাষের সাথে হাস-মুরগি পালন করে থাকেন। যারা মাছ চাষ করেন তারা শুধু মাছ চাষই করছেন। যদি একটু পরিশ্রম করে বাঁশ দিয়ে মাচান বা পাটাতন তৈরী করে সেখানে হাঁস-মুরগি পালন করলে একই স্থানে দু’টি ব্যবসা করা সম্ভব। এতে লাভ যেমন দ্বিগুন হবে পাশাপাশি মাছের খাবারও পাওয়া যাবে হাঁস-মুরগি থেকে।
পোলট্রি খামার: হয়তো ভাবছেন গ্রামে পোলট্রি খামারের ব্যবসা নতুন কিছু নয়। নতুন কিছু না হলেও গ্রামে একটি পোলট্রি খামার সুন্দর ভাবে যত্নসহকারে চলানো সম্ভব। বর্তমানে মানুষ খামারের মুরগির মাংস বেশি খায়।
কবুতর ও কোয়েল পাখি পালন: স্বল্প বিনিয়োগ করে শুরু করা যায় কবুতর ও কোয়েল পাখি পালন। অনেকেই কবুতর ও কোয়েল পাখি পালন করে স্বাবলম্বী। কবুতর এর মাংস ও কোয়েল পাখির মাংস-ডিম এর প্রচুর চাহিদা।
আপনি বাণিজ্যিকভাবে কবুতর ও কোয়েল পাখি পালন করতে পারলে, লাভবান হওয়া স্বাভাবিক।