মো:সাকিব চৌধুরী,স্টাফ রিপোর্টার-
হঠাৎ করে সার-ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রংপুরের কৃষকেরা। উৎপাদন খরচের সঙ্গে উৎপাদিত ফসলের মূল্যের সমন্বয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের। উৎপাদন সামগ্রীর দাম না কমালে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কমে আসবে। মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় শুধুমাত্র ইউরিয়া সারেই রংপুর বিভাগের কৃষকদের অতিরিক্ত গুণতে হবে সাড়ে ৩-৪ কোটি টাকা।
রংপুর জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে-রংপুর বিভাগে পুরোদমে শুরু হয়েছে রোপা আমনের আবাদ। এ বছর আমনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমি। ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে ৭ হাজার ৫৩৪ মেট্রিক টন, টিএসপি ১ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন, ডিএপি ৩ হাজার ৩৪৫ মেট্রিক টন ও পটাশ সারের চাহিদা রয়েছে ২ হাজার ৩৬২ মেট্রিক টন। এসব সারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকের বাড়তি গুণতে হবে প্রায় ১৬-১৮ কোটি টাকা।
রংপুর বিভাগে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কৃষক রোপা আমনের আবাদ নিয়ে পড়েছেন ঝুঁকিতে। সার, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদিত ফসলের সঙ্গে খরচের হিসাব মেলাতে পারছেন না তারা।
নির্ধারিত সময়ে সরকারি নিয়মে ধান ক্রয় শুরু না করায় বরাবরই ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন কৃষকেরা। এ বছর সার, ডিজেলসহ কৃষি কাজে ব্যবহৃত সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আসন্ন বোরো মৌসুমে কমে যাবে ফসলের চাষাবাদ।
রংপুর উপজেলার লাহিড়ীরহাট ইউনিয়নের ঈশ্বরপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল রব তালুকদার ও বালা পাড়া গ্রামের শামসুল মিয়া বলেন, আগে যেখানে আমরা তিন একর জমি চাষ করতাম এইবার এক একর জমি করবো। শুধু সারই নয় লোডশেডিংও আছে। এই অবস্থায় উৎপাদন খরচের সঙ্গে ফসলের হিসাব মেলাতে পারবো না। অনেক ক্ষতি হবে। তাই শুধু নিজেদের যে পরিমাণ খাদ্য লাগবে সেটাই চাষাবাদ করবো।
একই উপজেলার ঈশ্বরপুর ইউনিয়নের মেম্বার দুলাল প্রামাণিক বলেন, সরকার যে পরিমাণ দাম বাড়িয়েছে গ্রামাঞ্চলে আরো বেশি দাম দিয়ে সার ডিজেল কিনতে হবে। নানান অজুহাতে ডিলার সাব ডিলাররা দাম বেশি রাখবে। এসব কারণে চাষাবাদে কৃষকদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
লাহিড়ীরহাট উপজেলার ঈশ্বরপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে আসন্ন বোরো মৌসুমে উত্তরবঙ্গের বোরোর আবাদ কমে যাবে। যে কৃষক আড়াই হাজার মণ ধান উৎপাদন করে সে একশো মণ ধানের ফসল চাষ করবে। সার ডিজেল শ্রমিকের খরচ দিয়ে হিসাব করলে কৃষকের ক্ষতি হবে। তাই কৃষকরা অতিরিক্ত জমি চাষাবাদ করতে চাইবে না। সরকার যদি কৃষিকাজে ব্যবহৃত উপকরণ ভর্তুকি মূল্যে দেয় তাহলে খাদ্য উৎপাদন ঠিক থাকবে। নয়তো হুমকিতে পড়বে দেশের খাদ্য উৎপাদন।
রংপুর বিভাগের সুজন ও গবেষকরা বলছেন, এক একর জমিতে যত টাকা খরচ করে ফসল উৎপাদন করতে হয়, সেই টাকার পরিমাণ ধান উৎপাদন না হলে বা কম হলে ঋণ করে চাষাবাদ করতে চাইবে না কৃষকরা। সরকার এখনই বিষয়টি নিয়ে না ভাবলে দেশের খাদ্য উৎপাদন হুমকিতে পড়বে। অন্য দেশ থেকে খাদ্য আমদানি করার চেয়ে ভর্তুকি দিয়ে খাদ্য উৎপাদন নিরাপদ হবে। তাই বিষয়টি নিয়ে এখনই সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরা বলছেন, সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছুটা প্রভাব পড়বে। তবে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবেন কৃষকরা। তাছাড়া সরকার বিভিন্ন সময় কৃষকদের বিনামূল্যে সার বীজ দিয়ে যাচ্ছে