মোঃ সাকিব চৌধুরী:
শ্যামসুন্দরী খালের দূষিত পানি আর ময়লা-আবর্জনায় বংশ বিস্তার করছে মশা। এতে রংপুর নগরীর ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খালটি এখন মশা উৎপাদনের কারাখানায় পরিণত হয়েছে। একদিকে অসহ্য গরম সাথে বিদ্যুতের লোডশেডিং অন্যদিকে মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হয়ে পড়েছে নগরবাসী। তবে সিটি মেয়র বলছেন, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডেই মশক নিধন কার্যক্রম চালু করা হবে।
২০০৭ সালে তৎকালীন রংপুর পৌরসভা ক্যানেলটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ায় নগরবাসীর মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে।
নগরবাসীরা বলছেন, অবৈধ দখলদারের উচ্ছেদ না করায় নাব্যতা হারিয়ে দিনদিন সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে খালটি। এর ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই গোটা নগরীতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ জনগণকে। অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশন থেকে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম চালু করার ঘোষণা দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয় হাতে গোনা কয়েকটি ওয়ার্ডে। এর ফলে বঞ্চিত থাকে বেশিরভাগ ওয়ার্ড। এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। এজন্য খালটি উদ্ধারে তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ দখলদারের উচ্ছেদ অভিযান ও খনন-সংস্কার দাবি করেন। তা না হলে নগরীতে মশাবাহিত রোগবালাই বাড়তে পারে বলেও তারা ধারণা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরের তৎকালীন পৌরসভা এলাকায় জলাবদ্ধতা দূর এবং ম্যালেরিয়ার হাত থেকে পৌরবাসীকে মুক্ত রাখতে ১৮৯০ সালে পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ও ডিমলার রাজা জানকী বল্লভ সেন তার মা চৌধুরানী শ্যামা সুন্দরী দেবীর নামে এটি পুনঃখনন করেন। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ শ্যামাসুন্দরীর সম্মুখে নগরীর ঘাঘট নদী। এটি ঘাঘট নদী থেকে শুরু করে বর্তমান রংপুর নগরীর ধাপ পাশারী পাড়া, কেরানীপাড়া, মুন্সিপাড়া, ইঞ্জিনিয়ারপাড়া, গোমস্তাপাড়া, সেনপাড়া, মুলাটোল, তেঁতুলতলা, নূরপুর, বৈরাগীপাড়া হয়ে মাহিগঞ্জের মরা ঘাঘটের সঙ্গে যুক্ত হয়।
দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করায় বর্তমানে শ্যামসুন্দরী নামের ঐতিহ্যবাহী খালটি নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। এর দুই ধারে অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে খালটি। সামান্য বৃষ্টিতেই গোটা নগরীতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
সূত্রে আরও জানা যায়, ১১৭ বছর পর ২০০৭ সালে তৎকালীন রংপুর পৌরসভা ক্যানেলটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ায় নগরবাসীর মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। আবার যেখানে সংস্কার হয়েছে তা ধসে গিয়ে এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ময়লা-আবর্জনার স্তুপ জমে মশা উৎপাদনের কারাখানায় পরিণত হয়েছে।
খালের উৎস মুখ থেকে মাহিগঞ্জ পাটবাড়ি পর্যন্ত খালের দুই পাশের প্রায় ১০ কিলোমিটার সংস্কার কাজ হাতে নেওয়া হয়। এর জন্য আগে রংপুর বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় হাল জরিপ করা হয়েছে। মৌজাভিত্তিক কেল্লাবন্দ, রাধাবল্লভ, আলমনগর, রঘুনাথগঞ্জ ও ভগি এলাকার ১৭০ জনকে অবৈধ দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে সিটি কর্পোরেশন জানায়, ১৭০ অবৈধ দখলদারের মধ্যে ১১ জন আপত্তি দিয়েছে। তাদের আপত্তির কারণে উচ্ছেদ অভিযান হয়নি।
নগরীর রাধাবল্লভ এলাকার রিকশাচালক আশরাফুল ইসলাম ও গৃহবধু জেসমিন বেগম বলেন, শুধু ড্রেনেই মশা মারা দেখি। অন্য জায়গায় চোখে পড়ে না। দিন-রাত সব সময় মশা কামড় দেয়। মশার কামড়ে কোথাও স্থির থাকা যায় না।
শিক্ষার্থী হুমায়ন রশীদ শাহীন ও আবদুল হাসান মিলন বলেন, দিনের বেলা পড়তে বসলেও মশার কামড়ে থাকা যায় না। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই মশার উপদ্রব।
নগরীর সেনপাড়া এলাকার বাসিন্দা গৃহীনি গোলাপী বেগম ও নিউ ইঞ্জিনিয়ারপাড়ার নোমান হাসান বলেন, মশা মারতে কয়েল, স্প্রে, বৈদ্যুতিক ব্যাট সবই কিনেছি। কিন্তু কিছুতেই মশার কামড় থেকে নিস্তার পাচ্ছি না। দ্রুত শ্যামা সুন্দরী খালসহ নগরীতে মশা নিধক করার দাবি করেন তারা।
এদিকে শ্যামাসুন্দরী খনন, সংস্কার ও পরিষ্কার করতে নগরবাসী বিভিন্ন সময় আন্দোলন সভা সমাবেশ করলে আশ্বাস ছাড়া কিছুই জোটেনি।
এব্যাপারে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডেই মশক নিধন অভিযান শুরু করা হবে। শ্যামাসুন্দরী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।