চাঞ্চল্য, হত্যাকাণ্ডের পর নিয়মিত ওয়াক্ত নামাজের ইমামতিও করেন তিনি!
রাজধানীর দক্ষিণখানে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে যুবকের ছয় খণ্ড গলিত লাশ উদ্ধার করেছে র্যাব। গ্রেফতার করা হয়েছে ওই মসজিদের ইমাম মো. আবদুর রহমানকে। নিহত যুবকের নাম আজহারুল ইসলাম। তিনি গত ১৯ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মঙ্গলবার বিকালে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আবদুল মোত্তাকিম।
তিনি জানান, সোমবার রাত ৯টার দিকে র্যাব জানতে পারে দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে তীব্র দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। এলাকাবাসীর কাছে জানতে পারে, গত ১৯ মে থেকে আজহার নামে এক যুবক নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ আজহারকে খুঁজে বের করতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। পরে গোয়েন্দা তৎপরতা এবং গোপন সূত্রের ভিত্তিতে হত্যাকারী চিহ্নিত করা হয়।
র্যাব-১-এর অধিনায়ক আরও জানান, গার্মেন্টকর্মী আজাহারকে খুনের ঘটনায় মাওলানা মো. আবদুর রহমানকে দক্ষিণখান থানার মাদরাসাতুর রহমান আল আরাবিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আসামির কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত তিনটি চাকু ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। আসামির দেওয়া তথ্য মতে মঙ্গলবার দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে নিহত আজহারের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, মাওলানা মো. আবদুর রহমান সরদারবাড়ি জামে মসজিদে ৩৩ বছর ইমামতি করে আসছেন। আজহারের চার বছরের ছেলে মো. আরিয়ান ওই মসজিদের মক্তবে পড়াশোনা করত। আজহার নিজেও তার কাছে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করতেন। গত ১৯ মে আসামি মাওলানা মো. আবদুর রহমানের সঙ্গে আজহারের কোনও একটা বিষয়ে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আসামি ক্ষিপ্ত হয়ে আজহারের গলার ডানপাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করে।
পরবর্তীতে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশে আজহারের লাশ টুকরা টুকরা করে সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে জানান র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আবদুল মোত্তাকিম।
জানা গেছে, নিহত আজহারের স্ত্রীর সঙ্গে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. আবদুর রহমানের সখ্য গড়ে ওঠে। এর প্রতিবাদ করতে মসজিদে গেলে আজহারকে পশু জবাইয়ের ছুরি দিয়ে নিজ কক্ষে খুন করেন আবদুর রহমান।
নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে নিহতের স্ত্রী আসমা বেগম জড়িত কিনা, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তাকেও নেওয়া হয়েছে র্যাব হেফাজতে।
র্যাব কর্মকর্তা লে. কর্নেল মোত্তাকিম জানান, এই ঘটনার পেছনে পরকীয়ার সম্পর্ক আছে কি-না যাচাই-বাছাই করছি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আমরা আজহারের স্ত্রীকে হেফাজতে নিয়েছি। ঘটনার একদিন আগে স্ত্রী আসমা তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে চলে যায়। তিনি ঘটনার আগের দিন থেকে টাঙ্গাইলেই ছিলেন কি-না এবং হত্যায় তার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে, মোস্তফা নামের ওই এলাকার এক মুরব্বি গণমাধ্যমকে বলেন, মঙ্গলবার সকালে দুর্গন্ধ পাওয়া যায় মসজিদে। এ নিয়ে কানাকানি শুরু হয়। একপর্যায়ে তা জেনে পুলিশ ও র্যাব এসে ছয় টুকরা লাশ উদ্ধার করে। পরে হুজুরকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় র্যাব।
রিফাত নামের আরেক মুসল্লি বলেন, “ঠিক কখন আজহারকে খুন করা হয় তা আমরা জানি না। তবে হত্যার পর লাশ মসজিদের ভেতরে রেখেই ইমাম সাহেব আমাদের নামাজ পড়ান বলে মনে হচ্ছে।”
র্যাব-পুলিশ যা বলছে: আজহার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ইমাম আব্দুর রহমানের সঙ্গে নিহতের স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে র্যাব-পুলিশের সূত্র দাবি করেছে। সূত্র বলছে, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দক্ষিণখানের মধুবাগ এলাকায় ইউসুফ গাজীর ৩৯ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতেন আজহার। বাসায় আসা-যাওয়ার সূত্র ধরেই ইমামের সঙ্গে সম্পর্ক হয় তার স্ত্রীর। অন্তত এক বছর ধরে এই সম্পর্ক চলছিল। আজহার বিষয়টি টের পেয়ে পাঁচ মাস আগে বাসাও বদল করেন। ২০ দিন আগেও ইমাম ও আজহারের স্ত্রীর সাক্ষাৎ হয়। বিষয়টি জানতে পেরে আজহার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে তার নিজ বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে চলে যান। এরপর কালিহাতী থেকে ইমামকে ফোন করে তাদের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টি জানতে চাইলে ইমাম অস্বীকার করেন। ইমাম বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আজহারকে মসজিদে আসতে বলেন। সে অনুযায়ী ইমামের সঙ্গে দেখা করতে গত ১৯ মে দক্ষিণখানে সরদারবাড়ি মসজিদে আসার পর নিখোঁজ হন আজহার।
এ ঘটনা তদন্তের একপর্যায়ে দক্ষিণখানে মাদরাসাতুর রহমান আল আরাবিয়া থেকে আব্দুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে আজহারের লাশ উদ্ধার করা হয়।
ডিএমপির দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আজিজুল হক মিয়া জানান, আজহার নিখোঁজের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনও জিডি করা হয়নি। যেহেতু তার লাশ উদ্ধার হয়েছে, সেক্ষেত্রে এ ঘটনায় হত্যা মামলা হবে।