মোঃ সাকিব চৌধুরী,
অসহনীয় লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে রংপুরসহ বিভাগের আট জেলা। অভিযোগ রয়েছে, লোডশেডিং হয়ে তা কখনও কখনও তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে রংপুর বিভাগের শত শত কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে বেচাকেনার ভরা মৌসুমেও শপিং মল ও বিভিন্ন দোকানে ক্রেতার দেখা নেই। এদিকে প্রচণ্ড গরমে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। রবিবার (৩ জুলাই) রংপুরে সর্বোচ্চ ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
অন্যদিকে গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জাবেদ জানান, প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে রবিবার দুপুর পর্যন্ত ১১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদার তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। তবে অবস্থা স্বাভাবিক হতে কত সময় লাগবে তা জানাতে পারেননি কোনও কর্মকর্তা।
রংপুর বিদ্যুৎ বিভাগের নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী বলেন, রংপুর বিভাগে পিক আওয়ারে বিকাল ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নেসকো ও পল্লী বিদ্যুৎ মিলিয়ে চাহিদা রয়েছে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট। ফলে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করে রেশনিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, রংপুর জেলাসহ পুরো বিভাগে তিন দিন ধরে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে রংপুর নগরীতে আরও ভয়াবহ অবস্থা। বিদ্যুতের অভাবে শপিং মলসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা বন্ধ হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছে না।
নগরীর প্রেস ক্লাব মার্কেটের ব্যবসায়ী মইনুল ইসলাম জানান, বিদ্যুৎ যায় কিন্তু কখন আসবে তা কেউ বলতে পারে না। একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত।
একই কথা জানান জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মমতাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘লোডশেডিং আর প্রচণ্ড গরমে মার্কেটে বেচাকেনা নেই। কয়েক দিন পর ঈদ। এখন বেচাকেনার ধুম পড়ার কথা, কিন্তু ক্রেতা নেই।’
এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক অভিভাবক ও শিক্ষার্থী।
গৃহবধূ সাবিহা সুলতানা বলেন, ‘সরকার বলছে বিদ্যুতের সংকট নেই, তাহলে কেন এত লোডশেডিং’
সার্বিক বিষয়ে জানতে নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘রংপুর বিভাগে নেসকো আর পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দিনের বেলায় রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ৬০০ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০০ মেগাওয়াট। সন্ধ্যার পর থেকে চাহিদা ৭০০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট।’