স্টাফ রিপোর্টার-
শুরু হয়েছে রংপুর জেলা পরিষদের নির্বাচনী হাওয়া। এরই মধ্যে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা। করছেন অতীত ভবিষ্যৎ এর নানা হিসেব নিকেশ। উন্নয়ন, মূল্যায়ন, স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা কতটুকু পূরণ হলো তা নিয়ে চুলচেঁড়া বিশ্লেষণ চলছে রাজনৈতিক মহলে। আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রংপুর জেলা পরিষদের ভোট।
আসন্ন নির্বাচনে হাতে সময় কম থাকায় কেন্দ্র থেকে পাড়া-মহল্লা সব জায়গায় এখন একটাই আলোচনা কে হবেন জেলা পরিষদের কান্ডারী। তবে জেলা পরিষদের মূল নিয়ামক শক্তি রংপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বাইরে অন্য রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন অর্ধেকের বেশি। এর মধ্যে মিঠাপুকুর উপজেলায় ১৭টি ইউনিয়নের ৯ টিতে জামায়াত-বিএনপি ভাগ বসিয়েছে। তাই জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে এবার ব্যাপক কাঠখড় পোড়াতে হবে বলে মনে করছেন দলের স্থানীয় নেতারা। কেন্দ্র থেকেই যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এরই মধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন এমন তালিকায় রয়েছেন- সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বর্তমান প্রশাসক এ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দীন আহমেদ, সহ-সভাপতি এ্যাড. ইলিয়াস আহমেদ, এ কে এম ছায়াদাৎ হোসেন বকুল, জয়নাল আবেদীন, রোজী রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মন্ডল মওলা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক লতিফা শওকত, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহ নবী উল্লা পান্না, রেজাউল ইসলাম মিলন, এ্যাডভোকেট দিলশাদ ইসলাম মুকুল, মহানগর আ’লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আলেয়া খাতুন লাভলী, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. জাকিয়া সুলতানা চৈতী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম প্রামাণিক, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী পারভিন আক্তারসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা।
এদিকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন সে বিষয়ে এখন বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে আলোচনা। এক্ষেত্রে মনোনয়ন দিতে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, দলের প্রতি অবদান, প্রার্থীর পারিবারিক ও রাজনৈতিক পরিচয়, বর্তমান সময় দলীয় কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থীর দ্বারা দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কী না সেটিও বিবেচনার কথা বলা হচ্ছে।
জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানম বলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আমি নির্বাচিত হয়ে দেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়াসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র হাতকে শক্তিশালী করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।
আগামীতে আবারও মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে পিছিয়ে থাকা উপজেলা গুলোতে দল সুসংগঠিত করাসহ এলাকার অবশিষ্ট সার্বিক উন্নয়ন সাধনে আমি বদ্ধপরিকর।
জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. জাকিয়া সুলতানা চৈতী বলেন- ছাত্র রাজনীতি করেছি। বর্তমানে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছি। দায়িত্ব দেওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী’র উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আলেয়া খাতুন লাভলী বলেন, দলের জন্য সব সময় নিবেদিত হিসেবে কাজ করছি। দল যদি আমাকে মনোনীত করে আমি আশাবাদী চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবো। এবং একটি সুন্দর জেলা পরিষদ গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।
জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক লতিফা শওকত বলেন, দায়িত্ব পেলে জেলা পরিষদকে ঢেলে সাজাবো। প্রধানমন্ত্রী’র উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নিতে সকল ধরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো।
মহানগর আ’লীগের সহ-সভাপতি এ্যাড. দিলশাদ ইসলাম মুকুল বলেন, জেলা পরিষদের মতো একটি জায়গায় আমার দায়িত্ব পালনের সুযোগ হলে দল সুসংগঠিত করতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে সব সময় থাকবো। সেই সঙ্গে একটি মডেল জেলা পরিষদ গঠনে যে সকল উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন তা মাস্টার প্লান করে বাস্তবায়িত করবো।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মন্ডল মওলা বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছি। হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নিষ্ঠা ও দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করবো।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ইলিয়াস আহমেদ বলেন-জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেয়ে আমি নির্বাচিত হলে রংপুরের কোন দিকগুলো পিছিয়ে আছে তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেব।
আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে কেমন প্রার্থীর মনোনয়ন পাওয়া উচিত সে প্রসঙ্গে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু বলেন- বিগত দিনের চেয়ে এবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনটি বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। কারণ গত নির্বাচনে বেশিরভাগ স্থানীয় সরকার দপ্তরে আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়েছেন। এবার ইউনিয়নগুলোতে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াত, জাসদসহ অন্য দলের প্রার্থীরাও নির্বাচিত হয়েছেন। তাই দলীয় মনোনয়ন পেলেও এবারের নির্বাচনে প্রার্থীকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে।
তিনি বলেন-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি মনোনয়ন বোর্ড রয়েছে। বিগত দিনে দলের জন্য যাদের অবদান রয়েছে, সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে যারা রাজনীতি করেছেন তাদেরকেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে আমি মনে করি।
গত ২৩ আগস্ট জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এতে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের সময় ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর এবং ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১৭ অক্টোবর।