মো:সাকিব চৌধুরী, স্টাফ রিপোর্টার-
পাটখড়ি একসময় অবহেলার পণ্য হলেও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির আশীর্বাদে বহু ক্ষেত্রে পাটখড়ি’র ব্যবহার বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়, জ্বালানি, চারকল, পার্টিকেল বোর্ড মিলে, হস্তশিল্প তৈরীতে । জেলায় কৃষকেরা পাট বিক্রি করে যতটা লাভবান হচ্ছেন তার সাথে পাটখড়ি বিক্রি করেও কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও গ্রাম অঞ্চলে বেশিরভাগ বাড়িতে জ্বালানী হিসেবে বেশ নাম ডাক রয়েছে পাটখড়ির। বেশ কিছু মানুষকে পাটখড়ি শহরে বিক্রি করে জীবীকা নির্বাহ করতেও দেখা যায়।
এরই ধারবাহিকতায় সদর, ইউনিয়ন ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি পাটখড়ির আটি রোদে শুকাতে দিয়েছেন কৃষকেরা। ভালমত শুকিয়ে গেলে কৃষকদের বাড়ি থেকেই কিনে নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা। তারা পাটখড়ি কৃষকদের কাছ থেকে মোটামুটি দামে কিনে ভ্যানে করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকেন। এতে করে বাড়তি আয় করছেন অনেকেই। বাড়িঘরে, সবজি ক্ষেতের বেড়া, মাচা, পান বরজ, বিভিন্ন হস্তশিল্প পন্য তৈরীর কাজে পাটখড়ি’র আলাদা ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় আগে থেকেই।
কিন্তু বর্তমানে ব্যাপক হারে পার্টিকেল বোর্ড তৈরীতে ব্যবহার হচ্ছে পাটখড়ি এবং চারকলগুলোতে ব্যাপক হারে ব্যবহার হচ্ছে পাটখড়ি। অন্য দিকে পাটখড়ি পুড়িয়ে তার ছাই ব্যবহার হচ্ছে ফসলের ক্ষেতে।
রংপুর সদর উপজেলার চন্দন পাট ইউনিয়নের ঈশ্বরপুর জোলা পাড়া এলাকার কৃষক রমজান আলী জানান, ১০ শতক জমির পাট থেকে যে পাটখড়ি পেয়েছি সুন্দরভাবে শুকিয়ে পরিস্কার করে বিক্রি করতে পারলে তা থেকে ৩-৪ হাজার টাকা আয় করা যায়। পাটখড়ি সরাসরি চারকল বা বোর্ড ফ্যাক্টরিতে দিতে পারলে আরো বেশি দামে বিক্রি করা যাবে।
রংপুর সদর উপজেলার লাহিড়ীরহাট ইউনিয়নের ঈশ্বরপুর সর্দার পাড়া গ্রামের কৃষক আনিছুর ইসলাম বলেন, পাটকাঠির চাহিদা থাকায় ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। পাটখড়ি বিক্রি করে কিছুটা লোকসান পুষিয়ে নেওয়া যাবে। পাটখড়ি আগে শুধু জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হলেও বর্তমানে নানামুখী কাজে ব্যবহারের ফলে কৃষকেরা বাড়তি লাভবান হচ্ছেন। অনেকেই বাড়ি থেকে কিনে তা শহরে বিক্রি করতে শুরু করেছেন।
রংপুর জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রংপুর জেলায় এ বছর ৩২৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৪ হাজার ৬ মেট্রিক টন। যা গত বছরে আবাদ হয়েছিল ৩ হাজার ১৩৭ হেক্টর জমি। এতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ২৯২ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ৬৩৫ মেট্রিক টন।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক কৃষিবিদ বলেন, জেলার সব উপজেলাতে কম বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। রংপুর জেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ অঞ্চলের পাট রংপুরের বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরায় বিক্রি হয় বলে শোনা যায়। এর পাশাপাশি পাটখড়িও ইতোমধ্যে রপ্তানী হতে দেখা যায়। এতে করে কৃষকেরা বাড়তি মুনাফা অর্জন করতে পারছেন। ভবিষ্যতে পাটখড়িও দেশের বিভিন্ন পার্টিকেল বোর্ড মিল ও চারকল মিলে দিয়ে কৃষকেরা আর্থিক দিক দিয়ে আরও লাভবান হবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।