স্টাফ রিপোর্টার-
নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, চুক্তিসইসহ ৬ দফা দাবিতে রংপুর নগরীতে মানববন্ধন-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে বক্তারা, এজেন্ডায় না থাকলেও প্রধানমন্ত্রীকে ভারত সফরে ২০১১ সালে সিদ্ধান্তের আলোকে তিস্তা চুক্তিটির বিষয়টি ভারত সরকারকে জানিয়ে আসার দাবি করেন।
একইসাথে চুক্তি না হলেও প্রধানমন্ত্রীকে ভারত
থেকে ফিরে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন।তা না হলে বৃহত্তর গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সোমবার
(০৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানির সভাপতিত্বে এ সময় ঘোষণাপত্র পাঠ করেন পরিষদের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড.তুহিন ওয়াদুদ।
বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাফিয়ার রহমান, স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য গেরিলা লিডার সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কানু, সাদেকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আলী, আব্দুর রাজ্জাক, বখতিয়ার হোসেন শিশির, সাজু সরকার, মোস্তাফিজার রহমান,আশিকুর রহমান ও বাবুল আকতার প্রমুখ। এ সময় সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক অশোক সরকার, জাসদের জেলা সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ, সাংস্কৃতিক সংগঠক ডা. মফিজুল ইসলাম মান্টু প্রমুখ।
পরিষদের নেতাদের অভিযোগ, তিস্তা অববাহিকার রংপুর জনপদে খরা, বন্যা ও নদী ভাঙনে ঘরে ঘরে আহাজারি চলছে। নদী ভাঙনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বর্তমানে কোথাও কোথাও তিস্তা নদীর প্রস্থ হয়েছে ১০-১২ কিলোমিটার। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পরিস্থিতি ক্রমাগত বেসামাল হয়ে উঠছে তিস্তাপাড়ের জনজীবন। এ পরিস্থিতিতে তিস্তা চুক্তি সই এবং নিজস্ব অর্থায়নে বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন নদী আন্দোলনে সম্পৃক্ত নেতারা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন-এবছর ভারত থেকে ধেয়ে আসা অসময়ের উজানের ঢলে রংপুর অঞ্চলের তিস্তা অববাহিকায় সপ্তমবারের মতো বন্যা হয়েছে। হরকা বন্যা ও নদী ভাঙনের ভয়াবহতায় এই অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি হুমকির মুখে। খরাকালে গজল ডোবায় বাঁধ দিয়ে শুকনো মৌসুমে পানি আটকে রাখে ভারত। আবার একটু পানি বেশি হলেই বাংলাদেশকে কিছু না জানিয়ে গজল ডোবার গজবে ভাসাচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষদের। এতে প্রতিবছর ব্যাপক ফসলহানি ঘটছে। হুমকিতে পড়ছে খাদ্য নিরাপত্তা। নদী ভাঙনে বাড়ছে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা, বাড়ছে রংপুর বিভাগে গড় দারিদ্র্যের হার।
সংগঠকদের অভিযোগ, ২৩৫ বছর বয়সী নদী তিস্তার জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি কোনো পরিচর্যাই করা হয়নি। তিস্তার নাব্যতা নেই। নেই সামান্য গভীরতা। নদী শাসন ও বন্যা রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি করেছিল। তিস্তার ডান তীরে নড়বড়ে ওই বাঁধ থাকলেও তিস্তার বা তীর সম্পূর্ণ অরক্ষিত ও কোন বাঁধ নেই। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা নদী খনন, বাঁধ নির্মাণসহ তিস্তা অববাহিত উন্নয়নে সরকার প্রতিশ্রুত ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাস্তবায়ন অতীব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানববন্ধনে তিস্তা নদীর দুইপাড়ের জেলা নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষ রংপুরে আসেন। তারা তিস্তা চুক্তি সই ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্লাকার্ড বুকে ঝুঁলিয়ে দেন। মানববন্ধনটি রংপুর প্রেসক্লাব চত্বর থেকে জাহাজ কোম্পানী মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তিস্তাপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাথে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সাধারণ মানুষরাও এতে অংশ নেন।