মো: সাকিব চৌধুরী
রংপুর মহানগরীতে যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সদস্য ও রংপুর মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা হীরা’র দ্বিতীয় স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তৃপ্তি (৩০) নামের এক নারীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেউ বলছে আত্মহত্যা আবার পরিকল্পিত হত্যা। অনেকেই এঘটনা উদঘাটনের জন্য প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর আলমনগর পীরপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাড়ি থেকে ওই যুব সংহতির নেতার স্ত্রীর গলায় ফাঁস দেওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়। সে নগরীর তাজহাট আনছারীর মোড় এলাকার মৃত ফিরোজ আহমেদের মেয়ে বলে জানা গেছে।
পুলিশ, স্থানীয়রা ও তৃপ্তির পরিবার জানায়, নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ডের মুললিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বাটুয়ার ছেলে জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সদস্য ও রংপুর মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা হীরা তার দ্বিতীয় স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তৃপ্তি (৩০) কে নিয়ে নগরীর সেনপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিল। সম্প্রতি আলমনগর পীরপুর এলাকার আলমগীর হোসেনের বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। এর আগে প্রায় তিন মাস আগে ওই নারীকে বিয়ে করেন হীরা।
এর আগে ওই নারীর আরেকটি বিয়ে হয়েছিল। সে সংসারে দুইট সন্তানও রয়েছে। বিয়ের পর থেকে তৃপ্তির সাথে হীরার মনমালিন্য চলছিল। এর মধ্যে বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় তৃপ্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে এই মৃত্যুকে অনেকেই রহস্যজনক বলে মনে করছেন।
তৃপ্তির বড় বোন মুন্নী বেগম ও বড় ভাই সামিউল ইসলাম তুহিন সাংবাদিকদের বলেন, তৃপ্তি পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে হীরাকে বিয়ে করেন। এর পর থেকে তার সাথে আমাদের কোন সর্ম্পক ছিল না। যোগাযোগ হয়নি। লাশ উদ্ধারের পর খবর পেয়ে এখানে এসেছি। এর আগেও আমাদের বোন তৃপ্তির বিয়ে হয়েছিল। সে সংসারে দুইটি সন্তানও রয়েছে। পরে বিচ্ছেদ ঘটে এবং হীরাকে বিয়ে করে। তবে আমরা এখানে এসে জানতে পারলাম বিয়ের পর থেকে মনমালিন্য ছিল। মাঝে মধ্যে ঝগড়াও হতো। একারণে তৃপ্তির মৃত্যু নিয়ে আমাদের রহস্য দেখা দিয়েছে। সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে। এটি আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা নাকি উদঘাটনের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তারা আরও জানান, তৃপ্তির আগের স্বামী মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ ছিল কি না তা আমরা জানি না।
তবে তৃপ্তির বর্তমান স্বামী হীরা আত্বহত্যা দাবি করে বলেন, মঙ্গলবার রাতে তৃপ্তির সাথে ছিলেন। পরে সকাল ৯টার দিকে ব্যবসার কাছে বাহিরে যান। পরে তৃপ্তির মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে না পেয়ে তার জন্য নাস্তা নিয়ে সাড়ে ১২টার দিকে বাসায় এসে দেখি বাসার মূল গেট বন্ধ ও রুমের দরজা খোলা অবস্থায় রয়েছে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় দরজা খুলে দেখতে পাই তৃপ্তি ফ্যানের মধ্যে ঝুলে রয়েছে। কি করবো বুঝতে না পেরে প্রশাসনকে জানাই।
তিনি দাবি করেন, তার সাথে তৃপ্তির কোন ঝগড়া বিবাদ ছিল না কিংবা হয়নি। তার আগের স্বামীর (মাহবুবুর রহমান) সাথে যোগাযোগ ছিল কি না তা আমি জানি না। তৃপ্তির আগের ঘরে দুটি বাচ্চা রয়েছে। আমাদের গত দুই মাস আগে বিয়ে হয়েছে আগে সেনপাড়ায় ছিলাম এখন কয়েকদিন আগে পীরপুরের এই বাসায় বসবসা করছি।
স্থানীয় নারী কাউন্সিলর মনোয়ারা সুলতানা মলি বলেন, আমার বাসার পাশেই ঘটনা, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখি ওই নারীর লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলে রয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না। উপস্থিত সকলে যা দেখছে আমিও তাই দেখছি।
এব্যাপারে কোতয়ালী মেট্রোপলিটন থানার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য নিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এ ব্যপারে মেডিকেল রিপোর্ট ও তদন্ত না করে কোন কিছু বলা সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।