স্টাফ রিপোর্টার
রংপুরের তিস্তায় বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও বেড়েছে ভাঙন। এতে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে নিম্নাঞ্চলের মানুষ। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে নৌকায় পরিবার নিয়ে সরে যাচ্ছেন হাজারো বানভাসি মানুষ। এর ফলে নির্ঘুম রাত আর নৌকায় ভেসে ভেসে যেন যাযাবর হয়ে উঠেছেন কেউ কেউ। এদিকে কাউনিয়া তিস্তার পানি ১ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। জেলায় সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ভারতের গজলডোবা ব্যারেজ খুলে দেওয়ায় উজানের পানি এসে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নবাসী। গত দুদিন ধরে বৃষ্টি না থাকলেও শুধু উজানের ঢলেই জেলার মুসার চর ও বালাডোর চরে নতুন বসতগড়া প্রায় ৪০টি বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে; ভেঙেছে রাস্তাঘাট। একমাত্র চলাচলের রাস্তা ও আবাদি জমিও নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।
স্থানীয় সুমন, আলম জানান, জিও ব্যাগ ফেললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম হওয়ায় কোনো কাজেই আসছে না। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে শত শত বাড়িঘর, মসজিদ, কবরস্থানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তিস্তায় বিলীন হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
কাউনিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার মহিদুল হক ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, নদীগর্ভে বিলীনে ভূমিহীন ক্ষতিগ্রস্তদের ১০-৩০ কেজি চাল দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে আশ্রয়ণের প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত বাড়িঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম সময়ের আলোকে জানান, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে বোর্ড, বরাদ্দের সীমাবদ্ধতার ক্ষেত্রে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা ছাড়া জিও ব্যাগ অহেতুক ব্যবহার থেকে বিরত রয়েছে প্রশাসন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, রংপুরের কাউনিয়ার পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি কমতে পারে।
এদিকে কুড়িগ্রামে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদীর পানি ২৮ দশমিক ৭৭ সেন্টিমিটার মিটার, ধরলা নদীর পানি ২৫ দশমিক ২৪ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৫ দশমিক ৪১ সেন্টিমিটার, শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ২৯ দশমিক ৫৭ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি চিলমারী পয়েন্টে ২২ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বুধবার বিকালে জানান, কুড়িগ্রামে তিস্তার পানি এখনও বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্রসহ জেলার সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে আছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের আফজাল হোসেন জানান, ধরলা নদীর পাড়ে আমার বাড়ি। বাড়ির চারপাশে পানি উঠছে। আর একটু পানি বাড়লে আমার বাড়িঘরে পানি উঠবে। উঁচু জায়গায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। খুবই বিপদে আছি।
জেলা সদরের ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল মালেক বলেন, দুদিন থেকে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বাড়ছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ বলেন, সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার মজুদ এবং আশ্রয়কেন্দ্র ও প্রয়োজনীয় নৌকা প্রস্তুত রেখেছি।