মো: সাজেদুল করিম-
√ফির্+(বাংলা) ই = ফেরি। ফেরি অর্থ ফের, আবার, পুনরায়। কোনো বস্তু বিক্রি করার জন্য সেটা গ্রামে, গলিতে নিয়ে ঘোরার ক্রিয়া ভ্রমণপূর্বক বিক্রয় করাকে বলা হয় ফেরি।
ফেরিওয়ালা (বিশেষ্য)। রাস্তায় বা বাড়ি বাড়ি পণ্যদ্রব্য ফেরি করে বেড়ান যিনি /রাস্তায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে পণ্য বিক্রয় করেন যিনি,তাকেই ফেরিওয়ালা বলা হয়। মানবসমাজে কত ধরনের পেশার মানুষ রয়েছে তার হিসেব নেই। মানুষের নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদি যারা সম্ভাব্য ক্রেতাদের বাড়ি বাড়ি নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে তাদেরই বলা হয় ফেরিওয়ালা। ফেরিওয়ালারা মূলত চলমান দোকান হিসাবে কাজ করে।
তিনি একজন স্ব-নিয়ােজিত ব্যক্তি,যিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করেন, যার নাম ফেরিওয়ালা। শহর- বন্দরে খুব পরিচিত ব্যক্তি। গ্রামেও তাকে দেখা যায়। গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অনেক সময় বিভিন্ন রঙের পােশাক পরিধান করে ও অদ্ভুত শব্দ করেন। তিনি তার মালপত্র মাথায়-হাতে-ব্যাগে বা হস্তচালিত ছােট গাড়িতে বহন করেন। তিনি সাধারণত তার মালামাল সস্তা দামে ক্রয় করে ভালাে লাভে বিক্রি করেন।
যারা মাথায় ,কাঁধে কখনো বা ভ্যান রিক্সায় নানা পসরা সাজিয়ে বাংলার বুকে অলি গলিতে ঘুরে বেড়াত। এখনও দেখা যায়,তবে কদাচিৎ। শুধু গ্রামে নয় বাংলার শহর-বন্দরেও ফেরিওয়ালাদের মাঝে মধ্যেই দেখা পাওয়া যায়।
এই ফেরিওয়ালার ডাক প্রথম কবে শোনা যায়, কী পসরা সাজিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রথম ফেরিওয়ালা-
দের দেখা পাওয়া যেত / কী বা তাদের সুর ছিল? বিষয়টি নিয়ে খুব কমই অনুসন্ধান করা হয়েছে।
তবে জানা যায় যে, ভারতের কলকাতার বুকে ফেরিওয়ালাদের প্রথম ছবি আঁকেন বেলজিয়ান শিল্পী বাল্ থাজার সল ভিনস। ১৭৯৯ সালে কলকাতায় ছাপা তাঁর ‘ এ কালেকশন অফ ট্রু হানড্রেড অ্যান্ড ড্রেসেস অফ দি হিন্দুজ‘ বইয়ে কিছু ছবি প্রথম প্রকাশিত হয়।
রসরাজ অমৃতলাল বসু কিছু আলোকপাত করেছেন কলকাতার বুকে ফেরিওয়ালাদের ডাক আর আওয়াজ সম্পর্কে তাঁর অসম্পূর্ণ ‘স্মৃতি কথা পুরাতন’ পঞ্জিকায়। এই পঞ্জিকার লেখাটি ‘বসুমতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৩৩০-১৩৩১ সালের মধ্যে।
ফেরিওয়ালার পণ্যগুলাে মূলত মহিলা-শিশুদের নিকট আকর্ষণীয়। তিনি সচরাচর খেলনা, প্রসাধনী, ফিতা, তৈরি পােশাক, বাসন-পত্র, মিষ্টি, ফল ইত্যাদি বিক্রি করে। ক্রেতাদের বােঝাতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন তিনি। সবসময় দাবি করেন যে,তার পণ্য গুণাগুণে সবচেয়ে ভালাে। বিশেষ করে গ্রামের শিশু-কিশোররা তার ভালাে ক্রেতা,তাদের সাথে ভালাে যােগাযােগ রক্ষা করে চলেন তিনি।
একটি এলাকায় একই ফেরিওয়ালা বারবার আগমন করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অতি পরিচিত-প্রিয়জন হয়ে ওঠেন। ফেরিওয়ালারা সাধারণত ক্ষুদ্র পুঁজির ব্যবসায়ী। গ্রাম্য মহাজন কিংবা কোনাে বেসরকারি সংস্থা থেকে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করে তারা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
তারা সারাদিন বেচা-কেনা করে লভ্যাংশ বাবদ যা পান তা থেকে মহাজন কিংবা এনজিও’র কিস্তি পরিশােধ করে যা থাকে তা পরিমাণে অনেক কম। তারপরও তাদের মুখে হাসি লেগেই থাকে।
একজন ফেরিওয়ালা কঠোর পরিশ্রম করলেও তিনি বেশি উপার্জন করতে পারে না, কারণ- সাধারণত তার খুব কম পুঁজি থাকে এবং কম উপার্জন করেন। অনেক কষ্টে করেই তাকে পরিবারের ভরণ-পােষণ করতে হয়। তাই আমাদের সকলের উচিত,তার এ
পেশাকে সম্মান জানানাে।
(তথ্যসূত্র ইন্টারনেট)