মো: সাকিব চৌধুরী
বিরোধিতা করার জেরে রংপুর মহানগরীর চাঞ্ছল্যকর সাংস্কৃতিক কর্মী নাট্য শিল্পি রোমান সরকার হত্যাকান্ডে ৮ আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডআদেশ দিয়েছে আদালত।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর স্পেশাল ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ হায়দার আলী এই আদেশ দেন।
দন্ডপ্রাপ্তরা হলো, নগরীর পশ্চিম জুম্মাপাড়া মারুয়াপট্টি এলাকার হাফেজ আলীর ছেলে মোঃ আনিছ, মোঃ আশরাফুল, মোঃ আতারুল, মোঃ আমিনুল ওরফে বুদ্ধা, মোঃ আলামিন, জয়নালের ছেলে মোঃ খোকন ওরফে পাকনা খোকন, খয়ের মুন্সির ছেলে মোঃ মোজাম্মেল এবং কাওসারের ছেলে নুরুন্নবী। দন্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামীকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় আদালতে ৭ জন আসামী উপস্থিত থাকলেও আসামী নুরুন্নবী পলাতক রয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, সরকারী কৌশুলী আব্দুল মালেক।
মামলা সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম জুম্মাপাড়া এলাকার ভাইবোন নাট্যগোষ্ঠির সংগঠক রোস্তম সরকারের বড় ছেলে সংস্কৃতি কর্মী রোমান স্থানীয় মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাদের সাথে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এক সময় পুলিশ আসামীদের মাদকসহ গ্রেফতার করলে এ ঘটনায় রোমানের সহযোগিতা রয়েছে বলে তারা সন্দেহ করে। পরবর্তীতে আসামীরা রোমানের পরিবারের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলে। ২০০৯ সালের ২২ জুলাই সন্ধ্যায় রোমান বাজার করতে গেলে আসামীরা তাকে কৌশলে চিড়িয়াখানার প্রাচীরের কাছে ডেকে এনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক রোমানকে মৃত ঘোষণা করে।
এ ঘটনায় রোস্তম আলী বাদী হয়ে ৯ জনকে আসামী করে কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে আদালত সোমবার ৭ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড প্রদান করে। অনাদায়ে আর ৩ মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। আসামী নুরুন্নবীকে গ্রেফতারে পরোয়ানা জারীর আদেশ দিয়েছে আদালত।
নিহতের বোন জাতীয় মহিলা পরিষদের রিক্তা আক্তার জানান, ওরা আমার ছোট ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যাকারীরা রংপুর শহরের চিহ্নিত কুখ্যাত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ি ও সব ধরণের অপরাধের সাথে জড়িত। আমি চাই এই রায় যেন বহাল থাকে এবং তারা যেন কোনভাবেই জামিন না পায়।
রংপুর জজ আদালতের পিপি আব্দুল মালেক জানান, যাকে হত্যা করা হয়েছে সেই রোমান একজন সাংস্কৃতিক কর্মী ও নাট্যাভিনেতা ছিলেন। ওদের পুরো পরিবার রংপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সুপরিচিত। প্রতিবাদি রোমানকে যারা হত্যা করেছে তারা মাদক ব্যবসায়ি ও সন্ত্রাসী। যে রায় দিয়েছেন আদালত তাতে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা চাই তারা যেন কোনভাবেই আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে না আসে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শরিফুল ইসলাম বলেন, আদালতের এ রায়ে আমরা অসন্তুষ্ট। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।