জ্বালানি ব্যয় সাশ্রয়ে অফিস-আদালত এর কর্মঘণ্টা কমানোর প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে জ্বালানি সরবরাহ এর দায়িত্বরত রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।
কর্মঘণ্টা কমিয়ে সকাল ৯টা হতে বিকাল ৩টা পর্যন্ত করার অভিমত তৈরি করছে সংস্থাটি। বিপিসি এই অভিমত প্রস্তাবনা আকারে খুব দ্রুত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে । এবং ডলার
সরবরাহ বাড়িয়ে নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলা অব্যাহত রাখা, রেশনিং করে পরিবহনের পেছনে খরচ হওয়া জ্বালানি দ্রুত কমিয়ে আনাসহ জ্বালানি ব্যয় সাশ্রয়ে ‘বিপিসি’ বেশ কয়েকটি অভিমত তৈরি করছে ।
বিপিসি’র চেয়ারম্যান, এবিএম আজাদ বলেন-
“জ্বালানি ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে অফিস টাইম কমানোসহ আমরা বিভিন্ন ধরনের অভিমত তৈরি করছি। আমাদের এই ভাবনাগুলো বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাবৃন্দ বলেন- গত জুনের শেষ সপ্তাহে খোলাবাজার থেকে এলএনজি কিনতে প্রতি ইউনিট (এমএমবিটিইউ) খরচ হয়েছিল প্রায় ২৫ ডলার। সেটি এখন হয়ে গেছে প্রায় ৪০ ডলার। এ কারণেই সরকার খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রেখেছে। এমতাবস্থায় জাতীয় গ্রিডে যে পরিমাণ গ্যাস ঘাটতি হচ্ছে, তা দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে জোগান দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য বেশ কয়েকটি কূপ ওয়ার্কওভার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বমুখী থাকায় সরকার খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত বন্ধ রেখেছে । দেশীয় গ্যাস থেকেই চাহিদা পূরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে-এলএনজির দাম না কমা পর্যন্ত। এর ফলে দেশে গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে। গ্যাস সংকটে বেশ কিছু গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে সরবরাহ কমায় দেশজুড়ে চলতি মাসে লোড শেডিং শুরু হয় । যদিও চাহিদা কমে যাওয়ার ফলে ঈদের ছুটিতে লোড শেডিং কিছুটা কমলেও চলতি সপ্তাহ থেকে পুরোদমে কলকারখানা চালু হলে আবারও লোড শেডিং শুরু হবে।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন- “জ্বালানি সংকটের কারণে এই মুহূর্তে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে ২০০০ মেগাওয়াটের মতো। আমরা যদি বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে পারি তাহলে ঘাটতি ৫০০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।”
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ
বিষয়ক উপদেষ্টা সম্প্রতি বলেন -“দেশে বিদ্যুতের লোড শেডিং আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলমান থাকতে পারে। সরকার দেশজুড়ে লোড শেডিং নিয়ন্ত্রণে বিদ্যুতের চাহিদা কমাতে চায় । সে ক্ষেত্রে অফিস-আদালত এর কর্মঘণ্টা কমিয়ে সকাল ৯টা হতে বিকাল ৩টা পর্যন্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে। পাশাপাশি হোম অফিস করারও চিন্তা করা হচ্ছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রিডে সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত চাহিদা হতে পারে। সেখান থেকে কতটা কমাতে পারি সেই চিন্তা করা হচ্ছে। আমরা সাশ্রয়ী হলে হয়তো চাহিদা সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াটে নামিয়ে আনতে পারব। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এসির ব্যবহার ২৫-এর নিচে রাখা, মসজিদে এসির ব্যবহার কমাতে হবে এবং বিয়েসহ সব অনুষ্ঠান ৭টার মধ্যে শেষ করতে হবে। দোকানপাটগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বন্ধ করলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, তখন বিদ্যুতের চাহিদা কমে আসবে।”