সাজেদুল করিম –
চৈত্র সংক্রান্তি বাঙালির আরেক বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব। আজ ৩০ চৈত্র,১৪৩০বঙ্গাব্দের শেষ দিন
বা চৈত্র সংক্রান্তি । সংক্রান্তির দিন বলা হয় বাংলা মাসের সর্বশেষ দিনটিকে । একসময় বাঙালি বাংলায় উৎসবের আমেজে পালন করতো প্রত্যেক ঋতুর সংক্রান্তির দিনটি, যা কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত।
পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে চৈত্র সংক্রান্তির মাধ্যমে সফলতা ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় দেখা দেবে নতুন আলো। আগামী রবিবার বাঙালি মিলিত হবে জরাজীর্ণতা মুছে ফেলে পহেলা বৈশাখের সর্বজনীন উৎসবে।
আজো বাঙালি আগলে রেখেছে সংক্রান্তির দু’টি উৎসবকে;একটি চৈত্র সংক্রান্তি, অপরটি পৌষ সংক্রান্তি।
বছরের শেষ দিন হিসেবে পুরাতনকে বিদায় ও নতুন বর্ষকে বরণ করার জন্য প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে থাকে বাঙালির বিভিন্ন অনুষ্ঠান-উৎসবের আয়োজন। চৈত্র সংক্রান্তি আবহমান বাংলার চিরায়ত বিভিন্ন ঐতিহ্যকে ধারণ করে আসছে।
ধারণা করা হয়,চৈত্র সংক্রান্তিকে অনুসরণ করেই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের এত আয়োজন।
ইতিহাসবিদের মতে, চৈত্র সংক্রান্তি মানুষের শরীর ও প্রকৃতির মধ্যে একটি যোগসূত্র ঘটাবার জন্য জন্য পালন করা হয়। প্রকৃতি থেকে কুড়িয়ে আনা শাক, চৈতালি মৌসুমের সবজি, পাতা, মুড়া ইত্যাদি খেয়ে চৈত্র সংক্রান্তি পালন করার রীতি এখনো কোনো এলাকায় লক্ষ করা যায়। লোকপ্রথা অনুযায়ী, চৈত্র সংক্রান্তিতে বিশেষ খাবার ছাতু, চিড়া, দই, মুড়ি, খই, তিল ও নারিকেলের নাড়ু ইত্যাদি খেতে হবে। দুপুর বেলার খাবারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘চৌদ্দ’ রকমের শাক খাওয়া। এর মধ্যে অন্তত একটি তিতা স্বাদের হতে হবে। একটু টক জাতীয় কিছু থাকা জরুরি। মাছ–মাংস খাওয়া চলবে না।
গ্রন্থকার দীনেন্দ্রকুমার রায় বলেছেন যে, ‘বসন্ত আর গ্রীষ্মের সন্ধিস্থলে চৈত্র মাসে পল্লিজীবনে ‘নব আনন্দের হিল্লোল বহে’। গম, ছোলা, যব, অড়হর প্রভৃতি রবিশস্য পেকে উঠেছে, সুতরাং দীর্ঘ কালের ‘অনাহারে শীর্ণদেহ, ক্ষুধাতুর কৃষক পরিবারে যে হর্ষের উচ্ছ্বাস দেখিতে পাওয়া যায়, তাহা সুদীর্ঘ হিমযামিনীর অবসানে বসন্তের মলয়ানিলের মতই সুখাবহ।’
সেই আদি কাল থেকে আবহমান বাংলা জুড়ে চলে লোক উৎসব। বাংলার গ্রামে গ্রামে এই উৎসব নিয়ে আসে নতুন বছরের আগমন বার্তা। সকল ধর্মের মানুষের নববর্ষ বরণের আন্তরিক শুভ কামনার বিনিময়।(তথ্য সংগৃহীত)