পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ আর এই চাঁদের জমি বিক্রি করেন মার্কিন ডেনিস হোপ। একাধিক দেশে রয়েছে জমি বিক্রির অফিস। প্রতি একর জমির দাম শুরু ২৫ ডলার থেকে। তিনি জমির মালিক হিসেবে আইনত বৈধ ও আছে দলিল। মৌজা-পরচার মতো আইনি নথিও তাঁর আছে।
জমি কিনে চোখে দেখার সুযোগ না থাকায় দলিলের সঙ্গে ক্রেতাদের একটি করে চাঁদের মানচিত্র দেন তিনি। ক্রেতা যাতে বুঝতে পারেন কোন স্থানে জমি কিনলেন। হোপ এখন পর্যন্ত ষাট লক্ষেরও বেশি ক্রেতার কাছে চাঁদের ৬১.১ কোটি একর জমি বিক্রি করেছেন। হোপ এর দাবি, চাঁদের জমির চাহিদা ভালই। ক্রেতার ব্যাপারে কোন বাছাই করা তালিকা নেই তাঁর। তারকা থেকে সাধারণ চাকুরিজীবী পর্যন্ত সবাই রয়েছেন ক্রেতার তালিকায়। তিনি দাবি করেন তাঁর কাছ থেকে ৬৭৫ জন নামী তারকা জমি কিনেছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন আমেরিকার তিনজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, জিমি কার্টার এবং রোনাল্ড রেগনও।
হোপের বিক্রি করা একর প্রতি চাঁদের জমির দাম২৪.৯৯ মার্কিন ডলার থেকে শুরু এবং শেষ ৫০০ ডলারে। তবে বেশি দামেরও জমি আছে। এক একটি মহাদেশের সমান জমির দাম প্রায় ১৪ কোটি ডলারের কাছাকাছি।হোপ একটি বিষয় নিশ্চিত করেছেন সব জায়গা থেকেই পৃথিবীকে সমান ভাবে দেখা যাবে।হোপ জানিয়েছেন চাঁদের সবচেয়ে বৃহদাকৃতি জমির অংশটিতে ৫৩ লক্ষ ৩২ হাজার ৭৪০ একর জায়গা আছে। কিন্তু ক্রেতা এখনও পাননি। বেশি চাহিদা ১৮০০-২০০০ একরের জমিগুলির। হোপের সংস্থার নাম লুনার এমব্যাসি। লুনার এমব্যাসির বাংলা অর্থ চান্দ্র দূতাবাস।চাঁদে জায়গাজমি দেখেন এই সংস্থাটি। হোপ নিজেই সংস্থার সিইও। এই সিইও এর অর্থ সেলেশ্চিয়াল এগজিকিউটিভ অফিসার মহাজাগতিক বিশেষ অধিকর্তা। তবে নিজেকে ‘চাঁদের মালিক’ বলতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি। হোপ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞানের দৌলতে চাঁদের জমির ব্যবসার বুদ্ধি- রসদ অর্জন করেন।এ ব্যাপারে হোপকে সাহায্য করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের আনা একটি প্রস্তাবের ফাঁক ফোকর। ওই প্রস্তাবের মূল বিষয় ছিল সৌরজগতের মধ্যে থাকা মহা-জাগতিক বস্তু উপর বিশ্বের কোনও দেশ বা কোনও দেশের সরকার নিজেদের অধিকার, মালিকানা বা আইনি সত্ত্ব দাবি করতে পারবে না। কিন্তু কোথাও বলা ছিল না যে কোন ব্যক্তি এই দাবি করতে পারবেন না। হোপ ওই অসম্পূর্ণতাকে কাজে লাগিয়েই চাঁদের মালিকানা দাবি করেন। ১৯৬৭ সালে আনা ওই প্রস্তাবে পৃথিবীর প্রায় সবক’টি দেশ সম্মতি দিয়েছিল। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে হোপ রাষ্ট্রপুঞ্জকে একটি চিঠি লেখেন আটের দশকের একেবারে গোড়ার দিকে। তাঁর লেখা চিঠিতে চাঁদের জমি এবং খনিজ সম্পদের মালিকানা দাবি করেন তিনি। সে চিঠির জবাব আজও পাননি। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের মৌনতা দেখে তিনি সম্মতি ধরে নিয়ে চাঁদের জমি বিক্রি করতে শুরু করেন।
১৯৮০ সাল থেকে অর্থাৎ ৪১ বছর ধরে চলছে হোপের চাঁদের জমির বিক্রির রমরমা ব্যবসা। আট কিংবা ন’য়ের দশকে খাতা-পেন-খেলনার মতোই ব্যবসা শুরুর দিকে চাঁদের জমি বিক্রির বিজ্ঞাপন পোস্টার ক্রেতারা পড়তেন এবং তাঁরা আগ্রহ দেখালেও লুনার এমব্যাসির কার্যকলাপকে গভীরভাবে গুরুত্ব দেননি। তবে এখন হোপের দাবি অনেককেই ভাবিয়ে তুলছে। লুনার এমব্যাসির নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে।
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাদা, জাপান এবং কোরিয়ায় কার্যালয় রয়েছে আমেরিকার পূর্ব উপকূলে নেভাদায় লুনার এমব্যাসির মূল কার্যালয়। সব মিলিয়ে ডজন খানেক কর্মী কাজ করেন সেখানে। জমির চাহিদার রকমফেরে কর্মী সংখ্যা বাড়ে ও কমে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, চাঁদের জমি বিক্রির প্রক্রিয়া বৈধ হতে পারে না।কারণ প্রশাসন বা সরকার ছাড়া কেউ জমি বিক্রি করতে পারে না। বিষয়টি জানার পর দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন হোপ। নিজস্ব সরকার তৈরি করে ফেলেন তিনি। নাম দেন গ্যালাকটিক ইনডিপেন্ডেন্ট গভর্নমেন্ট। সেই সরকারের প্রেসিডেন্ট হোপ। ৪১ বছরের ব্যবসায়ে এখন হোপ শুধু চাঁদে থেমে নেই । পৃথিবীর উপগ্রহ থেকে তাঁর ব্যবসা ছড়িয়েছে ভিন্ন গ্রহতে। আপাতত হোপের সামনে চ্যালেঞ্জ একটাই। রাষ্ট্রপুঞ্জ যদি লুনার এমব্যাসির মহাজাগতিক অধিকারের চিঠির জবাব শেষ পর্যন্ত দিয়ে দেয় এবং তাদের দাবি খারিজ করে তবে ৬০ লক্ষ বিশ্ববাসীর চাঁদ ধরার স্বপ্ন ভঙ্গ হবে।সূত্র – আনন্দ বাজার পত্রিকা