মো: সাকিব চৌধুরী, স্টাফ রিপোর্টার-
রংপুরে কেরামতিয়া মসজিদ, কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদ, কোর্ট মসজিদ, রাধাবল্লভ জামে মসজিদ, চারতলা মসজিদসহ অনেক পুরাতন ও দৃষ্টিনন্দন মসজিদ রয়েছে। অনেকেই বলেন, ঢাকার পরপরই মসজিদের শহর হিসেবে রংপুর বিভাগকে আখ্যায়িত করে থাকেন। এমনি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ হিসেবে বেশ পরিচিত রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল জামে মসজিদ।
রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল জামে মসজিদ স্থাপিত হয়েছে প্রায় ৩৫ বছর আগে। প্রথমে টিনের বেড়া দিয়ে তৈরি হলেও পরবর্তীতে নির্মাণ শৈলী ও দৃষ্টিনন্দন হিসেবে বেশ পরিচিত পেয়েছে মসজিদটি। আয়তনের দিক থেকেও এটি অনেক বড়। বর্তমানে মসজিদটি দোতলা হলেও নির্মাণকাজ শেষ হলে মসজিদটি হবে তিনতলা বিশিষ্ট। মসজিদের প্রশস্ত সিঁড়ি দুটি ডিজাইন এবং দুটি মিনারের নির্মাণ শৈলী মসজিদটিকে আরও আকষর্ণীয় করে তুলেছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের কাছে। মসজিদের মেহরাব এবং সামনের দেয়ালে সোনালী রঙের টাইলস লাগানোয় সৌন্দর্য কয়েকগুন বেড়েছে। মসজিদটির ভেতরের পরিসর অনেক বেশি হলেও কলাম বা পিলার কম হওয়ায় একেবারে শেষ প্রান্ত থেকেও খতিব বা ঈমামকে দেখা যায়। ওজুখানা বড় হওয়ায় অনেক মুসল্লী একসঙ্গে ওজু করতে পারেন।
রংপুর বিভাগের বৃহৎ বাস টার্মিনালে মসজিদটির অবস্থান। প্রতিদিন এখান থেকে সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতাযাত করেন কয়েকহাজার যাত্রী। তাদের কথা মাথায় রেখে বেশ বড় পরিসরেই নির্মাণ করা হয় মসজিদটি।
রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল জামে মসজিদের নিচতলায় রয়েছে মোট ১৫ কাতার, ২য় তলায় ১৭ কাতার এবং বারান্দায় রয়েছে ৪ কাতার। প্রত্যেকটি কাতারে প্রায় ৪০ জন করে মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন। রয়েছে বর্ধিত অংশ। সেই হিসেবে মসজিদটিতে কাতারবন্দি হয়ে একসঙ্গে প্রায় ১৫০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
মসজিদের সম্মুখভাগে বড় বড় নারিকেল গাছ থাকায় গাছের ছায়া এবং সৌন্দর্য দুটিই তৈরি হয়েছে। মসজিদের তিনটি ফটক রয়েছে। এর মধ্যে আল কুরআন সাদৃশ্যে নির্মিত প্রধান ফটক অনেক দূর থেকেই আকৃষ্ট করবে যে কাউকে। সুন্দর সুন্দর টাইলস এবং মসজিদের রঙ সবমিলিয়ে নির্মাণ শৈলীকে আরও বেশি ফুটিয়ে তুলেছে।
মসজিদের শুধু নির্মাণ শৈলীর জন্য নয় শুক্রবার খতিবের বয়ান শোনার জন্য রংপুর বিভাগ ছাড়াও অন্যান্য জেলা শহর থেকেও মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে আসেন। মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজ আদায়ের আগে বয়ান শুরু হয় ১২টায়। প্রায় ১ ঘণ্টার বয়ান করেন খতিব। বয়ান শুনতে মুসল্লিরাও ১২টার আগেই চলে আসেন। বিশেষ করে সামনের কাতারে বসার জন্য অনেকেই সাড়ে ১১টার মধ্যেই মসজিদে আসেন।
মসজিদের খাদেম বাহার আলী জানান, মসজিদটি বাস টার্মিনালে হওয়ায় সবসময় লোকজন থাকে এবং সবসময় মসজিদটি খোলা থাকে।
মসজিদের বারান্দায় যাত্রীদেরকে বিশ্রাম নিতে দেখা যায় প্রায় সময়। তেমনি একজন বয়স্ক যাত্রী আব্দুল হক বিশ্রাম নিচ্ছিলেন বারান্দায় বসে। কথা বলে জানা গেল, এক ঘণ্টা পর গাড়ি ছাড়বে তাই মসজিদে ঠাণ্ডা পরিবেশে বিশ্রাম নিচ্ছেন তিনি।
স্থানীয় মুসল্লি আব্দুর রাজ্জাক জানান, ফজর ছাড়া প্রায় ৪ ওয়াক্ত নামাজ রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল জামে মসজিদে আদায় করেন তিনি। নামাজে অনেক মুসল্লি হয়। তৃপ্তি সহকারে নামাজ আদায় করা যায়।
ফুয়াদ হাসান নামের আরেক মুসল্লি জানান, মসজিদের নির্মাণ শৈলী দেখে ভালোই লাগে। বিশেষ করে সিঁড়ি দুটি চমৎকার। দূর থেকে দেখতে যেমন ভালো লাগে তেমনি কাছে এলে মসজিদের সৌন্দর্য দেখে মন ভরে যায়।
খতিব মাওলানা আব্দুর রশীদ এই মসজিদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩৩ বছর ৩ মাস ধরে খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।