বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত দেশের ৩ কোটি ৩৩ লাখ ২৩ হাজার ৬টি পরিবারের কাছে সাশ্রয়ী দামে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭৯৪ মেট্রিক টন পণ্য বিক্রি করেছে। এতে উপকৃত হয়েছেন ১৩ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ। পণ্যগুলোর মধ্যে আছে—সয়াবিন তেল, চিনি, মশুর ডাল, পেঁয়াজ, ছোলা, আলু এবং খেজুর।
মঙ্গলবার (২৫ মে) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন নিত্যপণ্যের উৎপাদন, আন্তর্জাতিক বাজার, আমদানি এবং স্থানীয় বাজার পরিস্থিতি সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সার্বিক দিকনির্দেশনা ও সিনিয়র সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীনের নেতৃত্বে টিম কমার্সের কার্যক্রমের ফলে লকডাউন পরিস্থিতি ও বিগত দুটি রমজান মাসের বাজারে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত এক বছরে, বিশেষ করে রমজান মাসে সব পণ্যের বাজারদর মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। শুধু ভোজ্যতেলের দাম এ সময় খানিকটা বাড়ে। ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ভোজ্যতেলের বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। জুন, ২০২০ এর পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
ভোজ্যতেল আমদানিনির্ভর পণ্য। তাই, ভোজ্যতেলের বাজারদর নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারদরের ওঠানামার ওপর। ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার ৯৫ ভাগেরও বেশি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। তাই, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় বাজারেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তবে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যে পরিমাণে বেড়েছে, স্থানীয় বাজারে সে পরিমাণে পায়নি।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজার দর পর্যালোচনায় দেখা যায়, এক বছর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম যেখানে কেজি প্রতি ৫২.১১ টাকা ছিল, বর্তমানে তা ১৩৫.৮৪ টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১৬০ শতাংশ। একই সময়ে স্থানীয় বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এক বছর আগে খোলা সয়াবিন তেলের বাজারদর ছিল ৮৮ থেকে ৯৩ টাকা, কিন্তু বর্তমানে তা ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ, এ সময়ে দেশীয় বাজারে দাম বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৩৫ শতাংশ। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে ১৬০ শতাংশ দাম বেড়েছে, একই সময়ে দেশীয় বাজারে এই দাম বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৩৫ শতাংশ।
সূত্র জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারদর যেভাবে বেড়েছে, স্থানীয় বাজারদর সে তুলনায় অনেক কম বেড়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের পারস্পরিক সহযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে বাজারদর এতটা কম রাখা সম্ভব হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর সংস্থা নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন নিয়মিতভাবে বিভিন্ন পণ্যের বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দেশব্যাপী নিয়মিত বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি, টিসিবি ট্রাক সেলের মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছে।