মো:সাজেদুল করিম-
শরৎ ঋতুর পরেই বাংলায় চিরায়ত হেমন্ত ঋতুর আগমন ঘটে। শরৎ ঋতু শেষ হয়েছে কিন্তু এর রেশ রয়েছে এখনো। নদীর পাড়ে, বিলের ধারে,বুনো পথে কাশফুল ফুটে আছে। কাশফুলে মনের আনন্দে বাবুই ঘুরে বেড়ায় ঝাঁক ধরে। আকাশ নীলের ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়ে হাসে মেঘ সরে গেলে। ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের দল । কার্তিক-অগ্রহায়ণ—এই দুই মাস নিয়ে বাংলার চিরায়ত হেমন্তকাল।
হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিক এলেই রাতের ফোঁটা ফোঁটা শিশির জমে থাকে গাছের পাতায় পাতায়, ধানের শীশে। ঘাসের বুকে। গাছের পাতাও ঝরে পড়তে দেখা যায়। সন্ধ্যা কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে।ভোরের সবুজ ঘাস আর আমন ধানের কচি পাতায় জমে থাকে শিশিরবিন্দু। মনের আনন্দে হেমন্তে ধান কাটতে কাটতে বাংলার কৃষক গান গেয়ে ওঠেন।
এই কার্তিকে মাঠে মাঠে ছড়িয়ে পড়ে সবুজের সমারোহ । মাঠে মাঠে ধানের শীশ ফুটছে। বাতাসে দুলছে কচি ধানের শীশ। যত দূর দৃষ্টি যায়, সবুজ আর সবুজ। অধিকাংশ আমন ক্ষেতে এখন শীশ বের হতে শুরু করেছে। হেমন্তের দ্বিতীয় মাস অগ্রহায়ণ ধান কাটার মাস। তখন কৃষকের বাড়িতে নতুন ধানের ঘ্রাণ ভাসবে।
হেমন্তের আগমনে বদলে যায় প্রকৃতি ও মানুষ।সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় প্রস্তুত হয় প্রকৃতি, খেজুরের রস সংগ্রহে প্রস্তুত হতে দেখা যায় গাছিদের। নতুন আলু তোলা শুরু হয় । গ্রামের পরিবেশে আনন্দ বিরাজ করে। ঘরে ঘরে নবান্নের আয়োজন শুরু হয়ে যায়। গ্রাম্য মেলা, ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস বানানোর আয়োজন,সব মিলিয়ে এক অন্যরকম আমেজ কাজ করে। হেমন্তে ফোটে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক,
প্রভৃতি।
কবি’র ভাষায় হেমন্ত –
সবুজ পাতার খামের ভেতর/হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে
কোন্ পাথারের ওপার থেকে/আনল ডেকে হেমন্তকে?/আনল ডেকে মটরশুঁটি,/খেসারি আর কলাই ফুলে/আনল ডেকে কুয়াশাকে সাঁঝ সকালে নদীর কূলে।/সকাল বেলায় শিশির ভেজা/ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে/হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায়/শরীর ওঠে শিরশিরিয়ে। /আরও এল সাথে সাথে/নুতন গাছের খেজুর রসে লোভ দেখিয়ে মিষ্টি পিঠা/মিষ্টি রোদে খেতে বসে। হেমন্ত তার শিশির ভেজা/আঁচল তলে শিউলি বোঁটায়/চুপে চুপে রং মাখাল/আকাশ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায়।