মোঃ ইউনুছ কবির, রংপুর সদর প্রতিনিধি:
রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে চালের বাজার আবারও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। বোরো ধানের ভরা মৌসুমে চালের মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতা ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।
তারা অভিযোগ করে বলেন, হাতে গোনা কিছু অটো রাইসমিল ও মজুদদার সিন্ডিকেট করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। চালের এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে তাদের কারসাজি রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদ্যুতের লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় অটো রাইসমিলগুলো ঠিক মত চাল সরবরাহ করতে না পারায় দাম বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর নগরীসহ উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২০০ অটোরাইস মিল মালিক নিজেদের ইচ্ছেমত মজুদের পাহাড় গড়ে তুলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। অটোরাইস মিলগুলো লাখ লাখ মণ ধানের মজুদ করে নিজেদের ইচ্ছেমত চালের দাম নির্ধারণ করছে। এছাড়া কিছু মজুদদার ব্যবসায়ীও চাল মজুদ করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এদিকে রংপুর নগরীর বৃহৎ চাউলের আড়ৎ মাহিগঞ্জ সহ বিভিন্ন বাজারের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ আগে মিনিকেট চালের (৫০ কেজি) বস্তা ছিল তিন হাজার টাকা, সেই চাল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ২০০ টাকা, ব্রিধান-২৮ (৮৪ কেজি) বস্তা ছিল তিন হাজার ৩০০ টাকা, বর্তমানে তিন হাজার ৫০০ টাকা, ব্রিধান-৪৯ চালের বস্তা (৮৪ কেজি) তিন হাজার ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে তিন হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৬০০ টাকা, পাইজাম (৫০ কেজি) দুই হাজার ১০০ টাকার স্থলে প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা, মোটা চাল বিভিন্ন প্রজাতির প্রতিকেজি ৫২ থেকে ৫৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, চালের এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কারসাজি রয়েছে বলে তার মনে করছেন। তারা বলেন, ছোট ছোট হাসকিং মিল ও চাতালগুলো এখন আর চলে না। বড় অটো রাইস মিল মালিকরা কমদামে ধান কিনে মজুদ করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জসহ দিনাজপুরের পুলহাট, বগুড়া, নওগাঁ ও রাজশাহী থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক চাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অটো রাইসমিলের মালিকরা চালের সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে বেশি দামে চাল বিক্রি করছে।
নগরীর মাহিগঞ্জে কথা হয় ক্রেতা মেহেদী হাসান সজিব ও আফজাল পাটোয়ারীর সাথে। তারা জানান, কদিন আগে যে চাল ২৭০০ টাকা বস্তা কিনেছে তা এখন ৩২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার না থাকায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই অতি দ্রত সময়ের মধ্যে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানান তারা।
রবিবার (১৪ আগস্ট) কথা হয় একই বাজারের পাইকারী চাল ব্যবসায়ী মতিন মিয়ার সাথে। তিনি জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোড শেডিং ও পরিবহন খরচ বাড়ায় অটো রাইসমিলগুলো ঠিকমত চাল সরবরাহ করতে পারেছ না, তাই চালের দাম বেড়েছে।
এব্যাপারে রংপুর চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, চালের দাম বৃদ্ধির জন্য অটো রাইসমিলগুলো দায়ি। অটো রাইসমিল মালিকরা আগে থেকে ধানের মজুদ গড়ে তুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে অটোরাইস মিলগুলোর সাথে পাল্লা দিতে না পেরে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা অসহায় হয়ে পড়েছে।