22.7 C
Rangpur City
Friday, October 24, 2025
Google search engine
Homeবিভাগীয় খবরবিয়ে সম্পন্ন, অনুষ্ঠান বাকি সীতাকুণ্ডে নিহত ফায়ার ফাইটার ফরিদের

বিয়ে সম্পন্ন, অনুষ্ঠান বাকি সীতাকুণ্ডে নিহত ফায়ার ফাইটার ফরিদের

মোঃ সাকিব চৌধুরী, রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ

ভ্যানচালক বাবা সাইফুল ইসলাম দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে ছেলেকে লেখাপড়া করান। বাবার স্বপ্নকে জয় করতে ১৮ মাস আগে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসে ফায়ার ফাইটার হিসেবে যোগ দেন ফরিদ। খুলনায় প্রশিক্ষণ শেষ করে সীতাকুণ্ড ইউনিটে যোগ দেন মিঠাপুকুর উপজেলার ইমাদপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের ফরিদুজ্জামান ফরিদ।

গত বছরের অক্টোবর মাসে সামাজিকভাবে একই উপজেলার পচারপাড়া গ্রামের এসা মনির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ হন। কথা ছিল আসছে কুরবানি ঈদের ছুটিতে বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান শেষে সংসার জীবন শুরু করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর সত্যি হয়ে উঠলো না। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ফায়ার সার্ভিস কর্মী ফরিদুজ্জামান ফরিদ। তার অপেক্ষায় বাড়িতে প্রহর গুনছেন ছোট বোন সাবিহা আক্তার। মানসিক ভারসাম্যহীন ছোট বোন অপেক্ষায় থাকলেও ততক্ষণে বাবা-মা ও প্রতিবেশীরা জানতে পারেন ফরিদের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

গত রোববার রাত ১টায় সীতাকুণ্ডের উদ্দেশে মিঠাপুকুর ছেড়েছে ফরিদের বাবা-মা ও মামাসহ ৫ জন। আজ সোমবার বিকেল ৪টায় সেখানে পৌঁছান তারা। সেখানে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কার্যক্রম চলছে বলে জানায় ফরিদের চাচা আমানুল্লাহ আমান।

সরেজমিনে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ইমাদপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শোকাহত পুরো গ্রাম। বাড়িতে অশ্রুসিক্ত স্বজনরা আহাজারি করছেন। সদ্য বিবাহিত স্ত্রী এসা মনি বাকরুদ্ধ। তাকে স্যালাইন লাগানো হয়েছে। স্বামীর কথা মনে উঠতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। তার মুখে একটাই কথা এখন আমার কী হবে, আমি কাকে নিয়ে বাঁচব। একই অবস্থা দাদি, নানি, চাচা ও চাচাতো ভাইদের, সবাই বাকরুদ্ধ।

ফরিদের মামা ইব্রাহিম মিয়া বলেন, টিভিতে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ দেখে ভাগিনা ফরিদের কথা মনে হয়। কারণ ফরিদুজ্জামান সেখানেই কর্মরত ছিল। এরপর তার বাড়িতে গিয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ফোন ফরিদের এক সহকর্মী রিসিভ করে। তিনি বলেন, ফরিদুজ্জামান হাসপাতালে আছে। কিন্তু কোন হাসপাতালে তা সে বলতে পারে না। এরপর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেলে আমাদের সন্দেহ বাড়ে। এরপর চট্টগ্রামে কর্মরত এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও ফরিদের কোনও খোঁজ দিতে পারে না। এরপর টেলিভিশনের মাধ্যমে ফরিদুজ্জামানের মৃত্যুর খবর জানতে পারি। এখন ডিএনএ পরীক্ষার অপেক্ষায় আছি।

ফরিদের মামা আল আমিন বলেন, সাইফুল ইসলাম ও ফুলমতি বেগমের একমাত্র ছেলে ফরিদ। আর এক মেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন সাবিহা আক্তার। কোনওরকমে তাদের সংসার চলে। ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী ও শান্ত ছিল ফরিদ। ভ্যান চালিয়ে ছেলেকে পড়ালেখা করিয়েছেন তার বাবা। বছর দুয়েক আগে সীতাকুণ্ডে প্রথম চাকরিতে যোগ দেয় ফরিদ। ছেলে চাকরি করলেও তার বাবা ভ্যান চালানো বন্ধ করেননি। ইচ্ছে ছিল ছেলে আর একটু স্বাবলম্বী হলেই পেশা পরিবর্তন করে নতুনভাবে সব সাজিয়ে গুছিয়ে নেবেন। কিন্তু সব স্বপ্ন এখন ফিকে হয়ে গেল।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস কর্মী ফরিদুজ্জামান ফরিদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পরিবারের বিষয়টি দেখা হবে।

রংপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফরিদ আহাম্মদ চৌধুরী বলেন, বছর দুয়েক আগে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে ফায়ার ফাইটার (সিপাহি) পদে যোগ দেন ফরিদুজ্জামান ফরিদ।

ফরিদুজ্জামানের অকাল মৃত্যুতে অসহায় পরিবারের প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

News
Newshttps://sotterkontho24.com/
রোড নংঃ ৫/১, বাসা নংঃ ৩৮৮, হোল্ডিং নংঃ ৪৪৫ স্টেশন রোড, আলমনগর, পীরপুর, রংপুর। মোবাইলঃ ০১৭৩৬৫৮৫৭৭৭
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

জনপ্রিয় নিউজ

সাম্প্রতিক মন্তব্য