31.1 C
Rangpur City
Saturday, September 21, 2024
Google search engine
Homeজাতীয়কেমন বাজেট চাই?

কেমন বাজেট চাই?

তুহিন চৌধুরী, রাজনৈতিক – সাংস্কৃতিক – ক্রীড়া সংগঠক

প্রতিবছর বাজেট প্রনয়নে সরকারের কর্তাব্যাক্তিদের সকলেই এবং প্রতিটি উইং ব্যাস্ত থাকে কেমন বাজেট প্রনয়ন করবে । বাজেট প্রনয়ন কত টাকার হবে।বাজেটের আঁকার এর অর্থ যোগান কোন কোন খাত হতে কত আহরন হবে ।বৈদেশিক ঋন সহ আভ্যন্তরীন খাত -রপ্তানি-উন্নয়ন-উৎপাদন-আমদানী শিল্প সকল খাত বিবেচনা করে বাজেট প্রনয়নে কাজ করেন। এর সংগে ব্যাস্ত থাকেন অভিজ্ঞ মানুষগুলো। কিন্তু এবার তার ধারা কি হবে ?কেননা সারা পৃথিবী যেখানে থমকে গেছে সেখানে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।বর্তমান পৃথিবীর অর্থনীতি একটা চ্যালেঞ্জে পড়েছে। বিশ্বের অনেক দেশ তার গতি ধরে রাখাটা একটা বাস্তবতার মূখোমূখি হয়ে অনেক কষ্ট করছে। সেখানে বাংলাদেশ যথেষ্ট শক্ত স্থানে দাড়িয়ে।সরকার এর সতর্ক অবস্থান সুদূরপ্রশারিত চিন্তা আর যোগ্য সরকার প্রধানই এর মূল রহস্য । রেমিটেন্স যোদ্ধাদের একটা বড় ভূমিকার পাশাপাশি দেশীয় শিল্প আমদানি রপ্তানি সচল রাখায় অনেকটা সহজ অবস্থানে এবং সরকার এক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চালকের আসনে।সাধারনত আমাদের দেশে অনেক সমালোচনা আমরা করি কিন্তু ভালো কাজের জন্য আলোচনায় উপনিত হই কম। আসন্ন বাজেটে আশা করা যাচ্ছে সরকার যুগপোযোগী বাজেট প্রনয়ন করবে ।

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের জনগনের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কৃষিকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং বাস্তব সম্মত বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে। পাশাপাশি বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের লক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। লক্ষ্য করি, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কৃষিখাতে মোট বাজেট বরাদ্দ রাখা হয় ২৯,৯৮১.১৭ কোটি টাকা যার মধ্যে গত ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত শুধুমাত্র ২২.৮৩% খরচ করা হয়েছে যা কিনা টাকায় ৬,৮৪৫ কোটি। দেশের কৃষিখাতকে আরো শক্তিশালী করার বিকল্প নেই, অথচ জুলাই – ডিসেম্বর ২০২০ এই ৬ মাসে কৃষিখাতে উন্নয়নে মাত্র ২,৭৯৩ কোটি টাকা খরচ করা হয়, যা কিনা এই খাতের মোট বাজেট এর মাত্র ৯.৩২% । আমদানি নির্ভর নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের জন্য প্রণোদনা এবং সরকারি সহায়তা ও নজরদারি বাড়িয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে পথে পা বাড়াতে হবে।

রপ্তানিখাতে ভ্যাট বাতিল করে সহজিকরন করে দেশের ব্যাবসায়ীদের উৎসাহিত করতে হবে, যার ফলে নতুন উদ্যোগতা এগিয়ে আসবে । চাকুরীর উপর চাপ কমবে এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে। করোনায় অনেক বিনিয়োগকারীগন নিরাপদ সহজ যায়গা খুঁজছে সেই দিক লক্ষ্য রেখে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এর পাশাপাশি বাজেটে সেই দিকটি লক্ষ্য রাখতে হবে। যেহেতু সরকার তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন আন্তরিক সেহেতু উত্তরাঞ্চল এ শিল্প বিনিয়োগ এর জন্য বাজেটে বরাদ্দ দিলে জাতীয় অর্থনিতীতে ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরী হবে। অপরদিকে আমাদের গার্মেন্টসখাত-চামড়া-পাটজাতদ্রব্য-হ্যান্ডিক্র্যাফ্ট এর জন্য সুযোগ তৈরী করা -কেননা এ খাতগুলোর কারনে আমাদের অনেকদুর এগিয়ে যাওয়া। জনশক্তি আমাদের একটি শক্তিশালী খাত। এছাড়া বাংলাদেশ ঔষধ খাতে প্রশংসনীয় অগ্রগতি, অংশগ্রহন করছে আন্তর্জাতিক বাজারে -অবদান রাখছে এই খাতে।পাশাপাশি এ ব্যাবসার অবস্থান শক্ত করার জন্য চাই রপ্তানীতে সহযোগীতাসহ সহজীকরন। এ খাত করোনার কারনে এবং সিন্ডিকেটদের কারনে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। এ খাতে যদিও সরকার অনেক ভাবনা চিন্তা করছে তারপরও বলবো এ খাতের ব্যাবসায়ীদের সরাসরি কাজে লাগানো এবং মনিটরিং এর আওতায় রেখে কাজ করাতে পারলে অবশ্যই বিশাল অবদান এবং দেশ এগিয়ে যাবার যথেষ্ট সুযোগ আছে, সেই সাথে রপ্তানিতে জোর দিতে হবে । যারা ভারী শিল্প -হাল্কা শিল্প গড়তে চায় দ্রুত তাদের সুযোগ করে দেয়া এবং দেশীয়/আন্তর্জাতিক বাজার এর চাহিদা মিলিয়ে তৈরী করতে হবে বাজেট।

শিক্ষাখাতে ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে কারিগরী শিক্ষার বিস্তারে মনোযোগ হতে হবে। শিক্ষা খাতে চলতি বাজেট এ মোট বরাদ্দ ছিল ৮৫,৭৬১ কোটি টাকা কিন্তু জুলাই – ডিসেম্বর ২০২০ এই ৬ মাসে মাত্র ২৪,৪৩৪ কোটি টাকা, যা কিনা এই খাতের মোট বাজেট এর মাত্র ২৮%। বর্তমান Covid -১৯ মহামারীতে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যাবস্থা থমকে গিয়েছে। সকলের শিক্ষা নিশ্চিতে শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকায়তনের পাশাপাশি দূরশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যা বিশ্বের অনেক দেশেই বিদ্যমান।

সরকারের আরেকটি বড় চিন্তা থাকে কর আদায় বা উৎস নিয়ে । সেক্ষেত্রে উপজেলা ভিত্তিক করের একটা গ্রেড করা যেতে পারে। যেমন এ বি সি ব্যবসার ধরনের উপর । তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে করদাতা যেন উৎসাহিত হন। কর্পোরেট করের আওতা কমাতে হবে এবং অতি বিলাশী বস্তু ভোগ্যপণ্য করের আওতায় নিতে হবে। রেমিটেন্স যোদ্ধাগন রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আজ বাংলাদেশ এর রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন।

দেশের চিকিৎসা খাতে বিশেষ নজর দিতে হবে সরকারকে। বরাদ্দের পুরোটাই যেন যথোপযুক্ত খাতে খরচ করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং জবাবদিহিতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বোপরি, একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে দেশে চাকুরীর খাত সৃষ্টি করতে হবে, যদি কিনা আমরা এই দেশকে একটা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ধরে রেখে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। অতীত ইতিহাস ভুলে সরকারি খাতে শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা করে দেশকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি দেশের উপর যে ঋণের বোঝা সেটা কমিয়ে আনতে হবে, এবং উন্নয়নমূলক খাতে ঋণের টাকা বিনিয়োগ না করে শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রয়াস করতে হবে। লক্ষ্য করি যে, চলতি বছরে আমাদের বাজেট এ মোট ৬৩,৮০১ কোটি টাকা শুধুমাত্র ঋণের সুদ বাবদ রাখা হয়েছে যা কিনা আমাদের মোট বাজেট এর ১৮.৩২% এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

আশা করছি আসন্ন বাজেট হবে জনগনের বাজেট। আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শ বুকে লালন করে সৎ এবং পরিশ্রমী জাতি হিসেবে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো।

News Desk
News Deskhttps://sotterkontho24.com/
রোড নংঃ ৫/১, বাসা নংঃ ৩৮৮, হোল্ডিং নংঃ ৪৪৫ স্টেশন রোড, আলমনগর, পীরপুর, রংপুর। মোবাইলঃ ০১৭৩৬৫৮৫৭৭৭
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

জনপ্রিয় নিউজ

সাম্প্রতিক মন্তব্য