20.9 C
Rangpur City
Sunday, December 22, 2024
Google search engine
Homeবিভাগীয় খবরপাট পঁচাতে না পেরে হতাশ রংপুর অঞ্চলের চাষী

পাট পঁচাতে না পেরে হতাশ রংপুর অঞ্চলের চাষী

স্টাফ রিপোর্টার-

রংপুরে প্রচন্ড খরায় পাট গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। আবাদ স্থানের কাছে-কিনারে পানি না পেয়ে পাট গাছ জাগ দিতে পারছেননা অনেক চাষী।

কেউ কেউ কাটা পাট গরুর গাড়ি বা ভেনে করে দূরে কোনো পানির এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে জাগ দিয়ে পাট পচানোর জন্য। অনেক কৃষক শ্যালো মেশিন ও মোটরের পানি দিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন বাড়তি খরচ করে।

ফাগুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে কৃষকরা জমিতে পাট বীজ বপন করেন। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় সময়মতো জমিতে পাটের বীজ বপন করা যায়নি। তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় পাট আবাদ কম হয়েছে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক উপ-পরিচালক জানান, চলতি বছর লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে ৫১ হাজার ৬২৭ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন। গত বছর পাট চাষের জমির পরিমাণ ছিল ৫৬ হাজার ৪১২ হেক্টর। এ বছর পাট চাষ হয়েছে রংপুরে ৯ হাজার ২৫৫ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১৬ হাজার ৫৭৭ হেক্টর, নীলফামারীতে ৬ হাজার ৭১০ হেক্টর, লালমনিরহাট ৪ হাজার ৮৫ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১৫ হাজার হেক্টর। পাটের আঁশ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন।

সরেজমিনে রংপুর অঞ্চলের চন্দনপাট ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষক পানির অভাবে পাটের জাগ দিতে পারছে না। বর্ষাকালে খাল-বিল, নদী-নালা বৃষ্টির পানিতে কানায়-কানায় ভরে যায়। কিন্তু এবার আগাম বৃষ্টি হলেও বর্ষায় বৃষ্টি নেই। তাই বিপাকে পড়তে হয়েছে কৃষক ও পাট চাষীদের।

রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের নালু মিয়া(৪৪) বলেন, স্যালো মেশিনে সেচ দিয়ে ৪ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন। পাট বীজ জমিতে বোনা থেকে শুরু করে কাটা, ধুয়ে বাজারে বিক্রি করা পর্যন্ত প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৬ শ থেকে ৭ শ টাকা হলেও শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

আবার পাট কাটার পর চাষীরা গরুর গাড়ি বা ভেনে করে পানি সমৃদ্ধ এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে জাগ দিয়ে পাট পচানোর জন্য। অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিন ও মোটরের পানি দিয়ে পাট জাগ দিতে গিয়ে বাড়তি খরচ করছেন।

আরেক চাষী আবু বক্কর (৪০) বলেন, ভাই গো, আমরা কৃষক মানুষ। কৃষি আবাদ করে চলে হামার সংসার। আমি মানুষের জমি বর্গা নিয়ে ৬০ শতাংশ জমিতে কোষ্টা (পাট) লাগাইছি। জলের অভাবে জাগ (পচা) দিতে পারছি না। কী করব তাই চিন্তাই আছি দাদা।

অন্য এক চাষী রাশেদুল ইসলাম (৫৫) বলেন, ভাই পানি তো নাই, পাট কাটতে পারছি না। পাট কাটলে তো পানিতে পচাতে হবে। আমরা যে খালে পাট পচাই সে খালে তো পানি নাই। যদি পানি হয় তাহলে পাট পঁচাতে পারব। না হলে কেটে খড়ি করতে হবে। আর পাট আবাদ করব না।

একদিকে পানি নাই, আর অন্য দিকে পাট কাটা লেবার পাওয়া যায় না। যদিও পাওয়া যায় তারপর দাম বেশি চায়। আমরা কোন দিকে যাব ভাই।

যেখানে ফলন ভালো হয়েছে সেখানে বিঘা প্রতি ৮ মণ এবং যেখানে ফলন খারাপ হয়েছে সেখানে বিঘা প্রতি ২ মণ পাট হয়েছে বলে জানান কৃষকেরা।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, রংপুর জেলায় ৯ হাজার ২৫৬ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। ফলন তুলনামূলক ভালো হয়েছে। তবে শ্রমিক সঙ্কটের কারণে পাট ঘরে তুলতে বেশি টাকা ব্যয় হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছে কৃষকরা। ন্যায্যমূল্য পেলে এই লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবে।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের রংপুর আঞ্চলিক কর্মকর্তা বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে কৃষকরা পাট পঁচাতে পারছেন না। রিবন রোটিং পদ্ধতিতে পাট পঁচানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এক সময় সমতলে প্রচুর পরিমাণে পাট চাষ হতো। এখন সেসব জমিতে খাদ্যশস্য উৎপাদন করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এ কারণে পাট চাষ এখন মূলত পরিত্যক্ত জমি ও চর এলাকায় হচ্ছে।

তিনি বলেন, উন্নত জাতের পাট চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। এ জন্য আমরা বিভিন্ন স্থানে কৃষকের মাধ্যমে প্রদর্শনী প্লট তৈরি করেছি।

News
Newshttps://sotterkontho24.com/
রোড নংঃ ৫/১, বাসা নংঃ ৩৮৮, হোল্ডিং নংঃ ৪৪৫ স্টেশন রোড, আলমনগর, পীরপুর, রংপুর। মোবাইলঃ ০১৭৩৬৫৮৫৭৭৭
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

জনপ্রিয় নিউজ

সাম্প্রতিক মন্তব্য