মো: সাকিব চৌধুরী-
শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে প্রজ্ঞাপন জারির খবরে জানা যায়, প্রায় ৫০ শতাংশ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে সরকার। ডিজেল ও কেরোসিন লিটার প্রতি দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৪ টাকা এবং অকটেনে ৪৬ ও পেট্রোলে ৪৪ টাকা। প্রজ্ঞাপন জারির খবর প্রকাশ পেলে ফায়দা লুটেছে ফিলিং স্টেশন মালিকরা।
আজ শনিবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকেই জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক এই দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জনজীবনে। এরই মধ্যে বাসের ভাড়া বৃদ্ধির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। পরিবহণ মালিকরা জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই রংপুরে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বাসের টিকিট। অথচ রোববার (৭ আগস্ট) ঢাকায় বৈঠক থেকে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত জানানোর কথা রয়েছে পরিবহণ মালিকদের।
সকালে রংপুর নগরীর কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডে গিয়ে দূরপাল্লার বাসের টিকিট বিক্রিতে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি দাম নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও টিকিট কাউন্টার থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে। তবে বেশ কিছু কাউন্টারে যাত্রীবেশে টিকিটের মূল্য বৃদ্ধির সত্যতা মিলেছে।
ডিজেলসহ সকল জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সকাল থেকে কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড হতে ছেড়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার এসি ও নন-এসি বাসে সিট প্রতি ১০০-২০০ টাকা করে বেশি ভাড়া নিতে দেখা গেছে। তেলের দাম বৃদ্ধিতে এমনিতেই নাভিশ্বাস সাধারণ যাত্রীদের, তার ওপর সিদ্ধান্ত ছাড়াই টিকিটের বেশি দাম নেয়াকে পকেটকাটা হিসেবে দেখছেন তারা।
এসআর, হানিফ, নাবিল, শ্যামলীসহ বেশ কয়েকটি কাউন্টারে দায়িত্বরত ম্যানেজাররা জানিয়েছেন, এসি বাসে সিট প্রতি টিকিটে ২০০ টাকা ভাড়া বেড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত নন-এসি বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি। আগে যেখানে একটি এসি বাসের সিটের জন্য টিকিট প্রতি নেয়া হতো ১৩০০ টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০০ টাকা। নন-এসি বাসেও যাত্রীপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি ভাড়া হতে পারে বলেও আভাস দেন তারা।
হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের সামনে কথা হয় ঢাকাগামী এক যাত্রীর সঙ্গে। বনানীর রাবেয়া আক্তার বলেন, অনলাইনে টিকিট কিনতে পরিবহণগুলোর সার্ভারে ঢোকা যাচ্ছে না। রাত থেকে সমস্যা হচ্ছে। এখন যে অবস্থা তাতে নতুন করে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত অনলাইনে টিকিট পাওয়ারও নিশ্চয়তা নেই। বাধ্য হয়ে স্ট্যান্ডে এসে টিকিট করলাম। কিন্তু আগের চেয়ে ২০০ টাকা বেশি লাগল। তবে নন-এসি বাসের টিকিট কাউন্টারে আগের দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এই যাত্রী।
এদিকে, আগমনী পরিবহনের শ্রমিকরা বলেন, ঢাকায় এখন পরিবহণ মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু তাদের হুকুমেই কোনো কোনো কাউন্টারে বেশি দামে বিক্রি শুরু হয়েছে। হয়তো আজকের মধ্যেই একটা সিদ্ধান্ত হবে। সেক্ষেত্রে ভাড়া বৃদ্ধি হলে ৭০০ টাকার টিকিট ৯০০ টাকা এবং ১৩০০ টাকার টিকিট ১৫০০ টাকা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিকটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে। তবে রংপুরে বাসের সংকট নেই বলে জানিয়েছেন এই পরিবহণ শ্রমিক।
রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, মেডিক্যাল মোড়, মডার্ন মোড়, পার্কের মোড়, মাহিগঞ্জ সাতমাথা, কলেজ রোড কুড়িগ্রাম বাসস্ট্যান্ডসহ অস্থায়ী বিভিন্ন স্ট্যান্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে দূরপাল্লার গণপরিবহণের বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুনেই গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে জ্বালানি তেল নির্ভর ট্রাক, কার, মাইক্রোবাস, পিক-আপসহ অন্যান্য পরিবহণে দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়তে শুরু হয়েছে।